পূর্ব বর্ধমান, কালনা: সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী রাত্রি মালিককে হাতে কলমের পাশাপাশি ধরতে হয়েছে টোটো রিকশর হ্যান্ডেলও। পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা এক নম্বর ব্লকের নিভুজি বাজারের কাছে রাত্রি মালিকের বাড়ি। ১৪ বছর বয়সি রাত্রি কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। এই বয়সে যে সময় বই খাতা কলম নিয়ে থাকার কথা, সেই সময় সপ্তম শ্রেণির রাত্রি মালিকের কাঁধে সংসারের দায়িত্ব।
তার বাবা মদন মালিক দু’বছর ধরে অসুস্থ, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঘরে একপ্রকার শয্যশায়ী বললেই চলে। এ ছাড়াও সংসারে রয়েছে মা এবং দেড় বছরের ভাই , পুরো সংসারের দায়িত্ব এখন রাত্রি নিজের হাতে তুলে নিয়েছে l সংসারে এখন একমাত্র রোজগারের পথ সপ্তম শ্রেণীর এই ছাত্রী। তার মা লোকের বাড়িতে কাজ করেন এবং তার সঙ্গে রাত্রি টোটো চালিয়ে তার পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করে চলেছে।
কিশোরী রাত্রির মা জানান, “সংসার এখন আমাদের মেয়েই চালাচ্ছে। মেয়ে ছাড়া এখন আমাদের কেউ নেই । কোনওরকমে এক বেলা খেয়ে দিন কাটায়, কখনো আবার দিনের বেলাতেও আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়। মেয়েকে পড়াশোনাও করাতে পারছি না , টিউশনের মাইনে দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই । এখনও পর্যন্ত আমাদের সাহায্যের জন্য কেউ আসেনি ,কেউ একবার জিজ্ঞাসাও করে না যে কীভাবে আমাদের দিন চলছে ।”
জানা গিয়েছে রাত্রি যে টোটোটি চালায়, সেটা অন্যের টোটো। প্রতিদিন টোটোর ভাড়া এর মালিককে দিতে হয়। সংসারের বোঝা কাঁধে নিতে গিয়ে ছোট্ট রাত্রি তার নিজের ইচ্ছা-শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে। তার জীবনের এখন একটাই লক্ষ্য-অসুস্থ বাবার পাশে দাঁড়ানো, ছোট্ট ভাইটাকে মানুষ করা, মাকে সাহায্য করা। আবার খুব ইচ্ছা স্কুলে যাওয়া ,পড়াশোনা করা মানুষের মত মানুষ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সব কিছু যেন মাত্র স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাত্রি জানায়, ” স্কুল যেতে পারছি না। অসুবিধা হচ্ছে। আমারও ইচ্ছা করে পড়াশোনা করতে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে । কিন্তু আমাদের যা পরিস্থিতি, কষ্ট করে এভাবেই আমাদের চলতে হবে। প্রশাসন যদি এসে আমার পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি।”
কালনার এসটিকেকে রোড ব্যস্ততম হাইরোড। প্রতিদিন কোনও না কোনও দুর্ঘটনা এই ব্যস্ততম পথে হয়ে চলেছে। আর এই রাস্তাতেই প্রতিদিন রাত্রি মালিক তার ছোট্ট নরম হাতে টোটো চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যায়। তার মা জানায় তাঁরা সরকার থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও ঘর পাননি। রাত্রিদের ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে যেন জতুগৃহ তৈরি হয়েছে ঘরটি। চারিদিকে বৈদ্যুতিন তারে জর্জরিত। যখন তখন বড়সড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে পরিবারটি l এই পরিবারটির এখন একটাই অনুরোধ, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ যেন তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়। কিশোরী রাত্রি যেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে l
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: East Burdwan, Toto