হিন্দুধর্মে ষোলোটি অবশ্য পালনীয় সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জন্মের পূর্ব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের কখন কী করা প্রয়োজনীয়. সেগুলিকেই সংস্কার আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই ষোলোটি সংস্কারের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করে আছে চূড়াকর্ম। চূড়া অর্থে শিখা। ব্রাহ্মণ পরিবারের পুত্রসন্তানদের এই সময়ে মস্তক মুণ্ডন করিয়ে বা মাথা কামিয়ে শুধু এক গোছা চুল অবশিষ্ট রাখা হত। একেই বলা হয় চূড়া বা শিখা। যে কর্মের মাধ্যমে চূড়া বা শিখা সম্পাদন করা হচ্ছে, তা-ই প্রচলিত ছিল চূড়া কর্ম নামে।
এ তো গেল ব্রাহ্মণ পরিবারের পুত্রসন্তানের কথা। সামগ্রিক ভাবে কন্যা-পুত্র নির্বিশিষে এই মাথা কামিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ কিন্তু সব হিন্দু পরিবারেই রয়েছে, একে বলা হয়ে থাকে মুণ্ডন সংস্কার বা মস্তক মুণ্ডন সংস্কার। ছেলেদের ক্ষেত্রে বিজোড় মাস, যেমন তৃতীয়, পঞ্চম বা সপ্তম মাসে এই মুণ্ডন সংস্কারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মেয়েদের বেলায় তা জোড় মাসে করা কর্তব্য়।
মুণ্ডন সংস্কারের প্রচলিত বিশ্বাস:
বলা হয়ে থাকে যে একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন সে পূর্ব পাপের সূত্রটিও নিজের সঙ্গে পৃথিবীতে বহন করে নিয়ে আসে। এই পাপ থেকে তাকে মুক্ত করতে তার মস্তক মুণ্ডন করা হয় এবং চুলগুলি দেবতার চরণে অর্পণ করে তার সৌভাগ্যের প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু এই ধর্মীয় দিকটি বাদ দিলে মুণ্ডন সংস্কারের কিছু শারীরিক উপকারিতাও রয়েছে।
মুণ্ডন সংস্কারের শারীরিক উপকারিতা:
১. এটি গ্রীষ্মে শিশুর শরীর, বিশেষ করে মাথা ঠাণ্ডা রাখে।২. বলা হয়, নতুন দাঁত ওঠার ব্যথা থেকেও রেহাই দেয় মাথা কামিয়ে দেওয়া।৩. পুরনো, অসমান চুল ফেলে দিলে মাথা নতুন, সুসমঞ্জস চুলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কোন কোন মাসে মুণ্ডন সংস্কার করা যায়?
উত্তরায়ণের মাসগুলি, যেমন- চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, মাঘ এবং ফাল্গুনে এর আয়োজন করা যায়। তবে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে জৈষ্ঠ্য এবং আষাঢ়ে মুণ্ডন সংস্কারে নিষেধ রয়েছে।
কোন কোন শুভ নক্ষত্রে মুণ্ডন সংস্কার করা যায়?
দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, পঞ্চমী. সপ্তমী, দশমী, একাদশী এবং ত্রয়োদশী তিথি মুণ্ডন সংস্কারের পক্ষে উপযুক্ত। এই তিথিগুলি মৃগশিরা, অশ্বিনী, পুষ্যা, হস্তা, পুনর্বসু, চিত্রা, স্বাতী, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রযুক্ত হলে তা শিশুর পক্ষে মঙ্গলময় বলে সাব্যস্ত হয়।
চলতি মাসে মুণ্ডন সংস্কারের উপযুক্ত সময়:
১. ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে পুষ্যা নক্ষত্রের অধিষ্ঠান হয়েছে, এই দিন সকাল ৬টা ২১ মিনিট থেকে রাত ১১টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত এই শুভকর্ম সম্পাদন করা যায়। ইংরেজি মতে দিনটি ২৪ মার্চ পড়েছে।
২. চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে হস্তা নক্ষত্রের অধিষ্ঠান হয়েছে, এই দিনটিও তাই মুণ্ডন সংস্কারের পক্ষে প্রশস্ত। ইংরেজি মতে দিনটি ২৯ মার্চ পড়েছে, সারা দিনে যখন সুবিধা শুভকর্মটির আয়োজন করা যায়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।