#কৃষ্ণনগর: নদিয়ার প্রাচীন নগরী শ্রীধাম নবদ্বীপের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গা নদী এবং তার অপর প্রান্তে মিঞাপুর তথা আজকের মায়াপুরের ধার দিয়ে বয়েছে জলঙ্গী নদী। দর্শনার্থীরা যখন নবদ্বীপ ধাম ভ্রমণ সেরে ফেরি পথে ট্রলারে করে মায়াপুর "ইসকন মন্দির" উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, তারা দেখতে পান, গঙ্গা তথা হুগলি ও জলঙ্গী নদীর মিলনস্থল। গঙ্গার জল মূলত ঘোলাটে বর্ণের হয় তবে জলঙ্গী নদীর জল হয় স্বচ্ছ প্রকৃতির। দুই নদীর মিলনস্থলেও জলের রং আলাদা! অনেকেই এর নানান রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ভূগোলবিদ জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী জানান, "সবার আগে জানতে হবে গঙ্গা এবং জলঙ্গী নদীর উৎপত্তিস্থল কোথায়। গঙ্গার উৎপত্তিস্থল হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে। সেখান থেকে পার্বত্য উচ্চ ঢাল বরাবর গঙ্গা নদী তার প্রবাহ পথে বয়ে নিয়ে আসে ক্ষয়প্রাপ্ত পলিরাশিকে, যা মূলত হিমালয় পর্বতমালার মুখ্য শিলা 'রূপান্তরিত শিলা' যার ইংরেজি নাম 'মেটামরফিক রকস' থেকেই সৃষ্ট। নদী তার প্রবাহ পথের ঢাল বরাবর ক্ষয় প্রক্রিয়ার জন্য সৃষ্ট 'বালি-পলি-কাদা' ইত্যাদি জলরাশির সাথে বয়ে নিয়ে আসছে, যার ফলে গঙ্গা নদীর জল হয় ঘোলাটে বর্ণের বা বলা যেতে পারে ধূসর রঙের। এবং জলটির ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়, পাশাপাশি সমুদ্রের জোয়ারের জল নবদ্বীপ পর্যন্তই আসে, যা নদীর জলের ঘনত্ব বাড়ায়।"
আরও পড়ুন: লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতিবাদ! এ বার 'খেলা হবে' সিপিআইএমের অন্দরে
তিনি আরও জানান, "অপরদিকে, জলঙ্গী নদীর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ প্রবাহিত পদ্মা নদীর একটি শাখার থেকে, যা মুর্শিদাবাদ জেলার কাছে ভগবানগোলা নামক জায়গা থেকে আনুমানিক ২৪০ কিলোমিটার সমতল ভূমিরূপের মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে এসে নদিয়ার নবদ্বীপের গঙ্গা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। জলঙ্গী নদীর জল সারাবছরই স্থিতিশীল থাকার ফলে এটি হয় স্বচ্ছ প্রকৃতির। তবে জলঙ্গী নদীর জল কিছু জায়গায় সবুজ বর্ণের দেখা যায়, যার কারণ 'ইউট্রোফিকেশন' যাকে বাংলায় বলা হয় 'শৈবালীকরন'।"
আরও পড়ুন: সবজি চাষেই বাজিমাত! লক্ষাধিক টাকার ঋণ শোধ! কী চাষে মজলেন 'এই' ভাগচাষি?
জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী যোগ করেন, "অতএব একটি সম্পূর্ণ ঘোলাটে রঙের নদী এবং একটি স্বচ্ছ পরিষ্কার জলের নদী যখন একত্রে মিশছে, তার পরেও তার রং এর তফাৎ যথেষ্টই বোঝা যাচ্ছে। তার কারণ, গঙ্গা নদীর জল ঘোলাটে হওয়ায় এর ঘনত্ব অনেক বেশি এবং জলঙ্গী নদীর জল স্বচ্ছ পরিষ্কার হওয়ায় তার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃতভাবে বেশ কম। সুতরাং ঘনত্বের তারতম্যের জেরেই দুটি নদীর জলের রং সহজে মেশে না। যার ফলে খুব সহজেই এই দুই নদীর ওপর দিয়ে নৌকা করে যাওয়ার সময় যেকোনো লোকই দুটি নদীর মিলনস্থল বুঝতে পারবেন।"
Mainak Debnath
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Nadia