গরুরা নিজেরাই গিয়ে দুধ দান করত তারকেশ্বরের শিবলঙ্গের মাথায়

আজ শ্রাবণী সোমবার ৷ মহাদেবের পুজোর দিন ৷ লক্ষ লক্ষ ভক্তের দল বাঁক কাঁখে নিয়ে তারকেশ্বরের পৌঁছে গিয়েছেন মহাদেবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে ৷

  • Last Updated :
  • Share this:

    #কলকাতা: আজ শ্রাবণী সোমবার ৷ মহাদেবের পুজোর দিন ৷ লক্ষ লক্ষ ভক্তের দল বাঁক কাঁখে নিয়ে তারকেশ্বরের পৌঁছে গিয়েছেন মহাদেবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে ৷কিন্তু কীভাবে সৃষ্টি হল তারকেশ্বরের স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ ? কে প্রতিষ্ঠা করেছিল এই মন্দির ? কীই বা তাঁর মহিমা ? চলুন জেনে নেওয়া যাক তারকেশ্বরের মন্দিরের প্রচলিত ইতিহাস---

    আরও পড়ুন: অফিসে ভুলেও মহাদেবের ছবি বা মূর্তি রাখবেন না

    ১৷ হুগলি জেলায় রয়েছে মহাদেবের এই প্রাচীন মন্দিরটি ৷ কলকাতা থেকে এর দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার ৷২৷ কথিত রয়েছে, এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক অবাঙালি শিবের উপাসক ৷ তাঁর নাম বিষ্ণুদাস ৷ বিষ্ণু দাসের এক ভাই শিবলিঙ্গের সন্ধান পেয়েছিলেন ৷ জঙ্গলের মধ্যে থেকে এই লিঙ্গটি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিষ্ণুদাস ৷

    tarakeswar1৩৷ স্থানীয় কিংবদন্তী বলছে, শিবভক্ত বিষ্ণু এসেছিলেন অযোধ্যা থেকে ৷ কিন্তু হুগলিতে এসে একঘরে হয়ে যান তিনি ৷ স্থানীয়রা তাঁকে ঠিক ভাল চোখে দেখতেন না ৷ এমনকী তাঁর উপর চলত অত্যাচার-নিপীড়নও ৷৪৷ এই কষ্ট থেকে উদ্ধার করার জন্য মহাদেবকে ডাকতে থাকেন তিনি ৷ এই সময় বিষ্ণুদাসের এক ভাই দেখতে পান, জঙ্গলের মধ্যে একটি পাথরখণ্ড রয়েছে ৷ গরুরা প্রতিদিন এসে ওই খণ্ডের উপর দুধ দান করে যায় ৷ বাড়িতে এসে দাদাকে সব কথা বলেন তিনি ৷

    আরও পড়ুন: শিব ঠাকুরের পুজোয় এইগুলো ভুলেও করবেন না

    ৫৷ তখনই স্বপ্নাদেশ পান বিষ্ণুদাস ৷ স্বপ্নে মহাদেব নির্দেশ দেন, ওই পাথরটিই তাঁর রূপ ৷ এরপর বিষ্ণু জঙ্গলের মধ্যে মহাদেবের মন্দির তৈরি করেন ৷ শিবের তারকেশ্বরের রূপে পূজিত হতে থাকেন মহাদেব ৷৬৷ তবে আজকের তারকেশ্বরের মন্দির অবশ্য মল্ল রাজাদের হাতে তৈরি ৷ সোনা যায়, স্বাপ্নদিষ্ট হয়ে মল্লরাজ ভারামল্ল ১৭২৯-এ এখানে মন্দির তৈরি করান ৷ রাজবাড়ি থেকে তারকেশ্বর মন্দিরের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এতটা পথ রানিমার পুজো দিতে আসতে অসুবিধা হয়, তাই পরিকল্পনা শুরু হল মন্দির স্থানান্তকরণের ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পুরনো মন্দির ছেড়ে যেতে চাননি মহাদেব ৷ তাই রাজবাড়ির কাছে নতুন মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজ ৷

    আরও পড়ুন: শ্রাবণের প্রথম সোমবার, শিবের আরাধনা করলে ফল মিলবে হাতে নাতে

    tarakeswar2

    ৭৷ পরে আজকের আটচালা মন্দিরটি তৈরি করেন শিয়াখালার গোবর্ধন রক্ষিত। স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ ছাড়াও মন্দিরে রয়েছেন বাসুদেব, দ্বিমতে ব্রহ্মা। তারকেশ্বর মন্দির বাংলার চালা স্থাপত্যের আদর্শ উদাহরণ। যে ক’টি প্রাচীন চালা মন্দির বাংলায় টিকে রয়েছে, তার মধ্যে তারকেশ্বর অন্যতম।৮৷ তারকেশ্বরের মহাদেবকে বলা হয় স্বয়ম্ভূলিঙ্গ ৷ কারণ তারকেশ্বরের শিবলিঙ্গ কেউ স্থাপন করেননি। অন্যদিকে, গঙ্গার পলল ভূমিতে ওই ধরনের পাথর মেলাও মুশকিল। তাই মনে করা হয়, শিব এখানে স্বয়ং অবির্ভূত হয়েছিলেন ৷

    আরও পড়ুন: পুজোর আগে এইভাবে মহাদেবকে অভিষেক করলে কোনও দিন টাকার অভাব হয় না

    ৮৷ মন্দির সংলগ্ন দুধপুকুরে স্নান করে বাবা তারকনাথের পুজো দেন সাধারণ মানুষ ৷ ভক্তদের বিশ্বাস, দুধপুকুরের জলে অলৌকিক শক্তি আছে ৷ এখানে স্নান করে পুজো দিলে আরোগ্যপ্রাপ্তি হয় ৷৯৷ মহাশিবরাত্রি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে তারকেশ্বর মন্দিরে বিশেষ উৎসব হয়। প্রতি সোমবার হয় বিশেষ পূজা। তবে, শ্রাবণের সোমবারগুলিতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগমে মেতে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন ৷

    First published:

    Tags: Background story, Story, Tarakeswar, Tarakeswar Mandir, Tarakeswar Temple