বানারহাট : একাধিক দাবি নিয়ে পরিবারের সদস্য সহ ধর্নায় বসেছেন ডুয়ার্সের (Dooars) মোরাঘাট বাগানের চার মহিলা শ্রমিক। বুধবার তাদের ধর্নায় তৃতীয় দিনে পড়ল। এদিন পাঁচটি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন।উল্লেখ্য চা বাগানে (Tea Garden) ৫ বছর ধরে বন্ধ থাকা শ্রমিকের কাজ ফিরিয়ে দেওয়া, শ্রমিক আবাস, ও কাজ বন্ধ থাকায় তাঁদের বকেয়া ফেরতের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন চার মহিলা শ্রমিক।
গত সোমবার রাত থেকে বাগানের শ্রমিক নেতা মনোজ ঠাকুরের বাড়ির গেটের বাইরে ধর্নায় বসেন এরপর গতকাল স্থান পরিবর্তন করে মোরাঘাট চা বাগানের ফ্যাক্টরি গেটে ধর্নায় বসেন তাঁরা। এদিকে বাগানে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে মঙ্গলবার বাগানের সমস্ত শ্রমিককে নিয়ে তড়িঘড়ি গেট মিটিং করেন বাগানের ট্রেড ইউনিয়নের সমস্ত নেতারা। এ দিকে বিভিন্ন দাবিতে চার মহিলা শ্রমিকের ধর্নার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় বানারহাট ব্লকের মোরাঘাট চা বাগানের শ্রমিক লাইনগুলিতে। ধর্নায় বসা চার মহিলা জানান, ‘‘ আমাদের দাবি না মেটা পর্যন্ত এভাবেই ধর্না চালিয়ে যাবো। ঘটনার কথা জানতে পেরে ধর্নায় বসা ৪ শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যান জলপাইগুড়ি জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি রাজেশ লাকড়া, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক তবারক আলি, বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দীপক শ্যাম, বিন্নাগুড়ির পঞ্চায়েত সদস্য অরুণ রাম, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ-সদস্য পুকার লামা।
আরও পড়ুন : দার্জিলিং নিয়ে নতুন ওয়েবসিরিজ, উত্তরবঙ্গ বইমেলা উদ্বোধনে এসে জানালেন অঞ্জন দত্ত
ধর্নায় বসা মহিলাদের মধ্যে সুমিত্রা চিকবড়াইক, বেচু মাহালী, বিলাসো নাইকের বক্তব্য, ‘‘ আমাদের ঘর না থাকায় আমরা নতুন ঘরে থাকা শুরু করলে বাগান কতৃপক্ষ নোটিস দেয়। এবং কিছুদিন পর সাসপেন্ড করে দেয়। তাই পরিবার নিয়ে বাধ্য হয়ে ধর্নায় বসেছি।’’ একই অভিযোগ করে জুলেখা আনসারি জানান, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষ হঠাৎ নোটিস দিয়ে আমাকে চা বাগানের শ্রমিকের কাজ থেকে বাতিল করে দেয়। এতদিনেও কোন সমাধান না পেয়ে বাধ্য হয়ে ধর্নায় বসেছি। ৫ বছর ধরে আমাদের কাজ বন্ধ করে রেখেছে। পরিবার নিয়ে আমাদের এখন আর বাঁচার উপায় নেই।’’
আরও পড়ুন : স্মার্ট ফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমাতেও বইমেলায় বইয়ের পাতায় মগ্ন খুদে পাঠকের দল
মোরাঘাট চা বাগানের ম্যানেজার বিবেক শরণ ভাটনগর জানান, ‘‘বাগানের সমস্ত কাজ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই করা হয়। যখন চা বাগানে পাকা শ্রমিক আবাস তৈরির কাজ চলছিল, সেই সময় অর্ধেক কাজ হতেই তালা ভেঙে এই চারটি পরিবার জোর করে নতুন শ্রমিক আবাসগুলির দখল নেয়। কিন্তু সেই আবাস যাঁদের নামে রয়েছে তাঁদের ফিরিয়ে দেবার জন্য ওই পরিবারগুলিকে বারবার চিঠি দেওয়ার পরেও তারা ঘর ছাড়েনি। তাই বাগানের নিয়ম মেনে তাঁদের একজনের কাজ বাতিল এবং ৩ জনের কাজ সাসপেন্ড করা হয়।’’
আরও পড়ুন : গভীর রাতে লোকালয়ে ভালুক, আতঙ্কে ধূপগুড়ি
আইএনটিটিইউসি-র জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি রাজেশ লাকড়া জানান, ‘‘আমি বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ধর্নামঞ্চে আসি। এবং পরিবারগুলির সাথে কথা বলি। তারা গত ৫ বছর ধরে সমস্যায় আছে। শ্রম আইন ও মজুরি আইনে লেবাররা যেদিন থেকে কাজে যোগ দেয় সেদিন থেকে নির্দিষ্ট টাকা ঘরভাড়া হিসেবে মালিককে দেয়। আমার ট্রেড ইউনিয়ন ও সমস্ত শাখা সংগঠন এই ধর্নায় বসা পরিবারের পাশে থেকে মালিকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আমরা মালিকের বিরুদ্ধে কোর্টে যাব।’’
চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন ডিবিআইটিএ-এর সম্পাদক সঞ্জয় বাগচী বলেন, " বাগানগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। লেবার কমিশনের নির্দেশিকা অনুয়ায়ী বাগানের সমস্ত ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে আবাস বিতরণ করা হয়। এ দিনের ধর্নায় বসা মহিলারা জোর করে নতুন শ্রমিক আবাস দখল করেছে। তাই তাদের কাজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘর ছেড়ে দিলেই আলোচনা বসে সমস্যার সমাধান সম্ভব।’’
( প্রতিবেদন : রকি চৌধুরী)নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Agitation, Dooars, Tea Garden