PARAFIP GHOSH #ফারাক্কা: ব্ল্যাকবোর্ড রয়েছে। ব্ল্যাকবোর্ডের গায়ে দগদগ করছে চকের দাগ। কিন্তু এতো সবের পরেও মন ভাল নেই ফারাক্কার কুলিদিয়াড়ের।
স্কুল বাড়িটাই যে তলিয়ে গেছে গঙ্গার ভাঙ্গনে। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে আধ খাওয়া ক্লাসরুম। কুলিদিয়াড় মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের বাকিটা আজ অতীত। মুর্শিদাবাদের ফারাক্কার কুলিদিয়াড় স্কুল মুছে গিয়েছে নদী ভাঙ্গনে। শুধু কুলিদিয়াড় নয়। আশপাশের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের আশা-ভরসা ছিল এই শিক্ষা কেন্দ্র। গ্রামের কৃষিজীবী, ক্ষেতমজুরের ঘরের সন্তানরা শিক্ষার আলো পেত এই স্কুল থেকে। নদীভাঙ্গনে সব শেষ।
সর্বনাশা ভাঙ্গন গিলে নিয়েছে কুলিদিয়াড় মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র। গিলে নিয়েছে এখানকার ভবিষ্যৎ। এই স্কুলের ব্লাকবোর্ড থেকেই তো ওদের অক্ষর-জ্ঞান। ভাল-মন্দের বিচার শেখাও তো এই ব্ল্যাকবোর্ড থেকেই। স্কুল বাড়ি গঙ্গার গ্রাসে তলিয়ে যাওয়ায় তাই আজ মন ভালো নেই কুলিদিয়াড়ের। এই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত চঞ্চল মন্ডল। কৃষিজীবী পরিবারের ছেলে চঞ্চল ভেঙে যাওয়া স্কুল বাড়ির সামনের মাঠে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে বলছিলেন, "এরপর কোথায় পড়ব বলুন তো? আশপাশের গ্রাম থেকে কত বন্ধু আসত!" নিজেদের ক্লাস রুমটা যেখানে ছিল, সেদিকটায় আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে থাকে চঞ্চল। আজ সেখানে শুধুই ঘোলা জলের পাড় ভাঙার খেলা।
সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর আধভাঙ্গা ক্লাস রুমের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বছর বারোর খুদে পড়ুয়া শূন্য দৃষ্টিতে বলতে থাকে, "লকডাউন উঠলে এই ক্লাসে এসে বসতাম। কিন্তু সেটা তো আর হল না।" বলতে বলতেই চোখ দিয়ে জল পড়ে কৃষক সন্তানের। নিজের শৈশব হাতড়ে বেড়ানোর মতোই ভাঙ্গা ক্লাস রুমের ভেতরে ঢুকে চকের ভাঙা টুকরো খুঁজে ব্ল্যাকবোর্ডের গায়ে আপন মনে কী যেন লিখতে শুরু করে ছোট্ট চঞ্চল!