#কলকাতা: ওঁরা ব্রাত্য নয়! প্রবাসী বাঙালিদের পরিচালিত প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্কুলে এ বারে বাগদেবীর আরাধনা করবেন এক রূপান্তরকামী পুরোহিত। ১৭ বছরের কিশোর অভিজিৎ বাগচী, ডাকনাম সুমন। এখনও বুক বাজিয়ে নিজের লিঙ্গ পরিচয় দিতে একটু হলেও ভয় পায়। সেই সুমনই এ বারে ঋদ্ধ গুরুকুলের পুজোর পৌরহিত্য করবে। পুজোয় অংশ নেবে স্কুলের পড়ুয়াদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরা এবং রূপান্তরকামী দলের অন্যান্য সদস্য তথা ওই গুরুকুলের শিক্ষকরা।
ঋদ্ধ গুরুকুল শুরু হয়েছে ২০২১-র ১৫ আগস্ট। কোচবিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গাঙালের কুঠি (বসারহাট) গ্রামে। কর্মসূত্রে সুদূর আমেরিকায় থাকা পারমিতা ঘোষ বহু বছর ধরে বিভিন্ন সমাজকল্যাণ মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রেই তাঁর পরিচয় হয়েছিল কোচবিহারের বসারহাট বাজার এলাকার একতি রূপান্তরকামী দলের সঙ্গে। অতিমারীর সময়ে তাঁদের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত থাকাকালীন পারমিতা জানতে পারে সেই অঞ্চলের বাচ্চা মেয়েদের ১৩-১৪ বছর বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর অল্প বয়সী মায়েরা এবং তাদের খুদে শিশুরা শীতলপাটি বানিয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা করে। শুরু হয় এই প্রান্তিক বাচ্চাগুলিকে শিক্ষা এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর বেড়ে ওঠার পরিবেশ প্রদান করা নিয়ে ভাবনা চিন্তা।
আরও পড়ুন: প্যাকেটে প্যাকেটে নিশ্চিত উপহার, বাজারে দারুণ হিট 'লক্ষীর ভাণ্ডার'-'খেলা হবে' চিপস
আমেরিকা এবং কানাডাতে থাকা আরও কিছু বাঙালি বন্ধু পারমিতার এই উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তখন থেকেই দু-বেলা সুষম আহার, শিক্ষা এবং শিখন শুরু হয় ঋদ্ধ গুরুকুলে। স্কুলটির আরও একটি উদ্যোগ মেইনস্ট্রিম সমাজের সঙ্গে রূপান্তরকামী মানুষদের সামাজিক পার্থক্য কমিয়ে আনা। তাই অত্যন্ত সচেতন ভাবেই স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে বেশ কয়েজন রূপান্তরকামী ব্যক্তির দ্বারা, যারা মূলত একটি স্থানীয় এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত। ফলে তৈরি হচ্ছে রূপান্তরকামী মানুষের মেনস্ট্রিম কর্মসংস্থান।
আরও পড়ুন: দুবেলা খাবার জোটে না! জাতীয় টেলিভিশনের অডিশন দিতে মুম্বই পাড়ি সায়নের, শুনুন খুদের গান...
কিছুদিন আগেই প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হয়েছে স্কুলে। এরপর স্কুলে চলছে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি এবং পৌরহিত্য করবেন রূপান্তরকামী কিশোর সুমন। পারমিতা এবং তাঁর বন্ধুদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে স্কুলের শিক্ষকরাও রূপান্তরকামী কমিউনিটি থেকেই উঠে আসুক। ঋদ্ধ গুরুকুলে এখন ১৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাঁদের বয়স ৬-১১ বছর। তবে, একটি রূপান্তরকামী বাচ্চা যখন বয়সন্ধির সময়ে বিভিন্ন কারণে স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে পড়ে। বৃহত্তর আশা, স্কুলটি এবং equity and equality-র ভাবনায় দীক্ষিত স্কুলের বাচ্চারা সেই সমাজতাড়িতদের নিজেদের একজন ভেবেই আপন করে নেবে।
স্কুল রূপান্তরকামীদের শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান এবং আত্মবিশ্বাস দিতে চায়। রাস্তা অনেক কঠিন। তবে নর্থ ক্যারোলিনা থেকে পারমিতা, কৌস্তভ, ববিতা, মনীষা, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সুব্রত, অনির্বাণ এবং কানাডা থেকে চিরন্তন, কৌস্তুভ-সবাই সঙ্গে রয়েছে কোচবিহারের বসারহাটের সুমি, ঈশ্বর, শুভ, সুমন এবং আরও অনেকের সঙ্গে, যাঁরা একদিন আত্মপরিচয় জানাতে দ্বিতীয়বার ভাববেন না।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Cooch behar