#মালদহ: এবারের পদ্মশ্রী পুরষ্কারের প্রাপকদের তালিকায় উজ্জ্বল বাংলা ও বাঙালি। কলকাতার কিংবদন্তি সাহিত্যিক নায়ারণ দেবনাথের পাশাপাশি উঠে এসেছে জেলার অল্পশ্রুত কিন্তু স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ছাপ রেখে যাওয়া মানুষেরা। সমাজসেবার জন্য মালদহের গাজোলে প্রত্যন্ত গ্রামের ‘গুরু মা’কমলি সোরেনও তেমনই একজন। পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য মনোনীত কমলির লড়াই আদিবাসী সমাজের ধর্মান্তকরনের বিরুদ্ধে। তবে তাঁর পদ্মশ্রী পাওয়ার সঙ্গে দক্ষিণপন্থী রাজনীতিরও ঝোঁক দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ।
মালদহের গাজোলের কোটালহাটি গ্রামে সাত কাঠা জমির ওপরে ‘গুরুমার’আশ্রম। বছর পঞ্চাশের আদিবাসী মহিলার বাবা মায়ের দেওয়া নাম কমলি সোরেন। তাঁর সূত্রে রাতারাতি যেন বিখ্যাত হয়ে উঠেছে প্রত্যন্ত কোটালহাটি গ্রাম। এখানেই প্রায় ২৫ বছর ধরে সমাজ সেবার কাজ করছেন কমলি। কার্যত ভিক্ষাবৃত্তি করে গড়ে তুলেছেন কল্যান আশ্রম।আদিবাসী সমাজে ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই জেহাদি কমলি। কিলোমিটার পর কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতার প্রচার চালিয়েছেন। কোটালহাটি ও আশেপাশের গ্রামে গুরুমার শিষ্য সংখ্যাও শতাধিক।
কমলি মনে করছেন, দুঃস্থ ,দরিদ্র ,অসহায় আদিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুল বুঝিয়ে ধর্মান্তকরন করা হয়েছে দীর্ঘকাল। এর বিরুদ্ধেই সাহস করে প্রচার চালান তিনি। তাঁর হাত ধরেই ভুল বুঝিয়ে ধর্মান্তকরন হওয়ারা ফিরেছেন হিন্দু ধর্মে। অন্তত ২০ জনকে এভাবে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়েছেন তিনি। আদিবাসীদের তো বটেই বহু ধর্মান্তরিত মুসলিমকেও হিন্দু ধর্মে ফেরানোর প্রয়াসে রয়েছেন গুরুমা। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। নিজের পৃথক আশ্রম থাকলেও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর জনজাতি সংগঠন বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের সদস্য কমলি। তাহলে কি সংঘঘনিষ্ঠতারই পুরস্কার, প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তবে গুরুমার ভক্তরা বলছেন উনি বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের কর্মকাণ্ড সঙ্গে যুক্ত হলেও ওনার আশ্রম পৃথক। তার আশ্রম নিছকই পূজার্চনা ও ধর্ম চর্চা কেন্দ্র।
এতদিন প্রচারের আলোর বাইরেই ছিলেন গাজোলের গুরু মা। পুরস্কার ঘোষিত হতেই ছবিটা বদলেছে। সকাল থেকেই তাঁর আশ্রমে ভিড় করছেন বহু মানুষ। এমনকি ফুল,মালায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁর সম্মান প্রাপ্তিতে খুশী ভক্ত ও শিষ্যরা।
গাজোলের মানুষ বিশ্বাস করেন লড়াইয়ের মুখ কমলি সোরেন। গরিব আদিবাসীদের খাবার জোগান দেওয়া আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ার কাণ্ডারী কমলি। গুরুমার পদ্মশ্রীসম্মান প্রাপ্তিতে খুশির হাওয়া আদিবাসী প্রধান গ্রামে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।