#মালদহ: দূর থেকে দেখলে মনে হবে আগাছায় ভরা জঙ্গল। উঁচু ডিপির মাঝে বড় নিমগাছকে ঘিরে নানান প্রজাতির আগাছায় ঘেরা। তার মাঝে একফালি পোঁড়া ইটের দালানের একাংশ দাঁড়িয়ে রয়েছে। খসে পড়ছে দালানের ইট। ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে থাকা ইটের দালানে আজও পরিষ্কার ইতিহাস। এবড়ো খেবড়ো অবস্থায় বেড়িয়ে থাকা গৌড়ীয় ইট ও ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে থাকা ভবনের নকশা প্রমাণ করে এটি প্রাচীন বাংলার রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। বর্তমানে অবহেলায়-অযত্নে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের এই এক টুকরো ইতিহাস। এটি সেন আমলের তৈরি দুয়ারবাসিনী চন্ডী মন্দির। লক্ষণ সেনের আমলে গৌড় নগরীকে বিশাল গড় (প্রাচীর) তৈরি করে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। শত্রুদের হাত থেকে রাজধানী ও প্রজাদের রক্ষা করতে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: রাস্তায় জমা জল, তার পরিণামে পিটিয়ে খুন! কী মারাত্মক ঘটনা ঘটল মালদহে...
গৌড়ের বিশাল এলাকাজুড়ে এখনও প্রাচীন এই গড় রয়েছে। মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের চন্ডিপুর গ্রামে বর্তমান দুয়ারবাসিনী চন্ডী মন্দির। ভগ্নদশা পুরনো মন্দির থেকে দুয়ারবাসিনী চন্ডীর বিগ্রহ সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের একপ্রান্তে তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি মন্দির। সেখানেই বর্তমানে বিগ্রহ বসিয়ে নিয়মিত পুজো হয়। তবে গৌড় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একপ্রান্তে মন্দিরটির অবস্থানের জেরে ব্রাত্য রয়ে গিয়েছে। না কোনও সরকারি নজরদারি, না আছে কোন উদ্যোগ। পর্যটকেরা গৌড়ে ঘুরতে আসেন। গৌড়ের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন বাংলার নগরীর ধ্বংসাবশেষ থেকে অবশিষ্ট ভাস্কর্য গুলি ঘুরে দেখেন। তবে ব্রাত্য থেকে যায় দুয়ারসিনী চন্ডী।
আরও পড়ুন: সপ্তাহব্যাপী তাণ্ডবের অবসান! আটক নকশালবাড়ির নয়া ত্রাস, স্বস্তিতে গ্রামবাসীরা
পর্যটকেরা তো দূর । জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই জানেন না দুয়ারবাসিনী চন্ডী মন্দিরের ইতিকথা। সেন বংশের কূলদেবী ছিলেন চণ্ডী। পালবংশের রাজা তৃতীয় বিগ্রহপালের পুত্র রামপাল তাঁর নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত রাজধানী রামাবতীতে নিজের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তী শাসক লক্ষ্মণসেন রামাবতী থেকে দক্ষিণে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান। নিজের নামানুসারে তার নাম দেন লক্ষ্মণাবতী বা লখনৌতি। এই রাজধানীই পরবর্তী সময়ের গৌড়। এই গৌড়ের নগরদদূর্গের চারদিকের রক্ষাকর্ত্রী চারজন দেবীর চারটি মন্দির বা পীঠ ছিলো। তাদের মধ্যে উত্তরদিকের মাধাইচণ্ডীর পীঠ গঙ্গাগর্ভে বিলীন-পূর্বদিকে জহুরাচণ্ডী,পশ্চিমে দুয়ারবাসিনী ও দক্ষিণে পাতালচণ্ডী। সবগুলিরই প্রতিষ্ঠাকাল মোটামুটিভাবে ১১৭৯ থেকে ১২০৭ খ্রিস্টাব্দ।
এই চন্ডীমন্দিরগুলির মধ্যেই দুয়ারবাসিনী মন্দির বর্তমান ইংরেজবাজারের চন্ডিপুর দ্বারবাসিনী গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটির সংস্কার করে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার দাবি তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে জেলার ইতিহাসবিদদের একাংশ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Malda