সেবক দেবশর্মা, মালদহ: নতুন রূপে সাজতে চলেছে রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র মালদহের 'আদিনা মসজিদ'। বাংলায় সুলতানি আমলে শিল্প উৎকর্ষের অনন্য নজির সাড়ে ছ'শো বছরেরও বেশি পুরনো এই মসজিদ। যা তৈরি করেছিলেন তৎকালীন বাংলার সুলতান সিকন্দার শাহ। প্রায় ৫০ বছর পর নতুন করে সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে আদিনা মসজিদে। সংস্কার কাজ শেষ হলে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় রূপে ধরা দেবে এই ঐতিহাসিক নিদর্শন।
তৈরির সময় মালদহের আদিনা মসজিদ ছিল এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম মসজিদ। পৃথিবী বিখ্যাত সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের 'উমাইয়া মসজিদের' সঙ্গে শিল্পকলায় মিল রয়েছে আদিনা মসজিদের। ১৩৬৪ থেকে ১৩৭৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০ বছরের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছিল অনবদ্য এই মসজিদ। এর কারুকার্যে বাংলা, আরব, ফার্সি, ও বাইজেন্টাইন স্থাপত্যকলার মেলবন্ধন চোখে পড়ে। তৈরির সময় মালদহের পান্ডুয়া ছিল সুলতানী বাংলার রাজধানী। আর আদিনাতে গড়ে তোলা হয়েছিল এই রাজকীয় মসজিদ।
আরও পড়ুন- অস্তমিত দশায় রয়েছেন দেবগুরু বৃহস্পতি, এই কয়েক রাশির সৌভাগ্যও থাকবে সুদূর পরাহত!
উত্তর দক্ষিণে এর বিস্তৃতি ৫২৪ ফুট, চওড়ায় ৩২২ ফুট। আদিনা মসজিদে রয়েছে ৩৮৭টি গম্বুজ এবং ২৬০ টি থাম। ঐতিহাসিকস্থল আদিনা দেখতে বছরভর গাজলে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক। বর্তমানে এই মসজিদ রয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে। দীর্ঘদিন ধরে আদিনা মসজিদের একাধিক অংশে ফাটল বা ভেঙেচুরে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অবশেষে প্রায় পাঁচদশক পর শুরু হয়েছে আমুল সংস্কার। প্রত্নতত্ত্ব বিশারদ ও বিশেষজ্ঞ শিল্পীদের হাতে নতুন রূপ পাচ্ছে আদিনা। প্রাচীন যুগের শিল্পকলা আর নির্মাণশৈলী বজায় রাখতে সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদের তৈরি গৌড়ীয় ইঁট, ইঁটের গুড়ো, চুন, পাকা বেল, গাব, মেথি, খয়ের, কলাই ভেজা জলের মতো বেশকিছু উপকরণ। ইতিমধ্যেই বেশকিছু দম্ভের মেরামত কাজ শেষ করা হয়েছে। মালদহের আদিনা মসজিদের বিশেষত্ব ছিল এখানে সাধারণ প্রজাদের সঙ্গে একইসঙ্গে নমাজে অংশ নিতেন সুলতান।
আরও পড়ুন- শুরু হয়েছে শশ মহাপুরুষ রাজযোগ, শনিদেবের কৃপায় এই ৩ রাশির আর দুর্ভাগ্য বলে কিছু থাকবে না!
প্রতি শুক্রবার রাজ পরিষদের সদস্য এমনকি রাজ পরিবারের মহিলারাও এখানে নমাজে অংশ নিতেন। এখানে ইমামের জন্য উচ্চ আসন, সুলতানের বসবার জন্য বাদশাহ কি তহখত বলে আলাদা আসন ছিল। রাজপরিবারের মহিলাদের ধর্মাচরণের জন্যও নির্দিষ্ট ছিল আলাদা জায়গা। এই মসজিদের একপ্রান্তে সুলতান সিকন্দার শাহ সমাহিত। ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, সাড়ে ছ'শো বছরেরও বেশি প্রাচীণ এই আদিনা মসজিদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে। সেইসময় একাধিক গম্বুজ ভেঙে পড়ে। প্রচণ্ড ক্ষতি হয় আদিনা মসজিদের। এরপর মাঝেমধ্যে অল্পবিস্তর সংস্কারের কাজ হয়েছে। তবে সম্প্রতি আদিনার সংস্কার ও সংরক্ষণ শুরু হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন ইতিহাসবিদরা। ইতিমধ্যেই আদিনা মসজিদের বেশ কিছু অংশ সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। তবে, সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও কয়েকমাস সময়ের প্রয়োজন হবে। আদিনার সংস্কারে খুশি পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Malda, Malda News