ডুয়ার্স: নতুন বছরে পর্যটকদের ডেস্টিনেশন ডুয়ার্সে মোরাঘাটের সবুজ জঙ্গলে ঘেরা মেলা বস্তি। ইতিমধ্যেই আটটি হোম- স্টে চালু হয়েছে। এক অসাধারণ পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত এই হোমস্টে গুলি, তিন পাস জঙ্গলঘেরা একপাশে চা-বাগান। তার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নদী।সারাদিন দেশি-বিদেশি পাখির কোলাহল কলতান, যা মুগ্ধ করবে পর্যটকদের। আর তাতেই পর্যটকদের যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে সেকথা বলাই যায়।
আরও পড়ুন: বড়দিন হোক বা নতুন বছর! ছুটিতে ডাকছে সবুজে ঘেরা কালিম্পংয়ের পাহাড়ি গ্রাম "পাবং'!
সেই কারনে মরাঘাট জঙ্গলের মাঝে রাভা মেলা বস্তির হোমস্টে গুলি পর্যটকদের আকর্ষিত করবে এমনটাই আশা করছেন হোমস্টে মালিকরা। কারণ ভিড় এবং গ্যাঞ্জাম ছেড়ে কিছুটা নিরিবিলিতে দিন ও রাত্রি যাপন করতে চান পর্যটকেরা।তাই মেলা বস্তিতে তৈরি হওয়া এই হোম -স্টে স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটকদের কাছে যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলাই যায়।
কোথায় অবস্থিত এই হোম-স্টে?
ডুয়ার্সের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বুক চিরে যাওয়া রাজ্য সড়ক ধরে গয়েরকাটা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খট্টিমারি বিট অফিসের বাঁ দিক দিয়ে মেঠো পথ ধরে কিছুটা পথ এগোলেই এই হোম স্টে গুলি।যায় একপাশে রয়েছে ঘন জঙ্গল অন্যপাশে চা বাগান রয়েছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট নদী,তার মাঝেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের কোলে তৈরি হয়েছে হোম - স্টে।
যেখানে খুব সহজেই দেখা মিলতে পারে হাতি, চিতা, বাইসন, হরিণের মতো তৃণভোজী বন্যপ্রাণী দের। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি,ময়ূর, বনমুরগি। এখানে পর্যটকরা যেমন প্রকৃতির কোলে খুলে নিশ্বাস নিতে পারবেন, তেমনি দেশি বিদেশি পাখির কলতানে তারা মুগ্ধ হবেন।
আরও পড়ুন: পাহাড়ের কোলে কমলালেবুর দেশ সিটং, নিরিবিলি আর বন ফায়ারে জমুক ছুটির মেজাজ!
উল্লেখ্য,এতদিন ডুয়ার্সে আসা পর্যটকদের ঘুরতে যেতে হতো গরুমারা, বক্সা , জলদাপাড়া, নেওড়াভ্যালি ,মূর্তি,অথবা লাভা, লোলেগাঁও অথবা চাপড়ামারি তে। তবে ঘরের কাছে চা বাগান ঘন জঙ্গল ঘেরা এক চিলতে এলাকা পিছিয়ে পরা জনজাতিদের নিয়ে গঠিত রাভা বনবস্তি ।সেই রাভা জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠা এই হোম স্টে গুলি।
হোম স্টে গুলির ভাড়া - মাথা পিছু ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। খাবার-দাবার সহ বলছেন মালিকরা। ইতিমধ্যেই পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন।পাশেই রয়েছে গোসাইহাট ইকোপার্ক পক্ষীরালয় কেন্দ্র,যা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। তবে দেশি-বিদেশি পাখিরা আশা কিন্তু বন্ধ করেনি।
শীত পড়তেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন দেশি-বিদেশি পরিযায়ী পাখির দল। তাই পর্যটকেরা এখানে থাকলে সেই পাখিদের দেখতে পারবেন। এমনকি সেখানে রয়েছে রাত্রি যাপনের সুযোগ সেই সঙ্গে রাতে গা ছমছম করা জঙ্গলের দৃশ্য ও রাভা জনজাতির মানুষের নৃত্য উপভোগ করার পাশাপাশি ব্যবস্থা থাকছে জঙ্গলের লাগোয়া নদীর ঝিলা মাছের মত ছোট মাছের ঝোলের মত সুস্বাদু খাবারের। চলতি বছরের বড় দিন থেকেই শুরু হবে পর্যটকদের আনাগোনা। এমনকি পর্যটকদের ভিড় টানতে সক্ষম হবেন এই হোম স্টে গুলি।এমনটাই আশা করছে পর্যটন ব্যবসায় থেকে হোম স্টে মালিকেরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যাদের হাতে জঙ্গল রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিয়েছে সরকার, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না থাকায় বনবস্তির এই মানুষদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি জড়িয়ে পড়েছেন গাছ কাটার কাজে। যদিও সরকারের নতুন উদ্যোগে বেআইনি কাজ থেকে দূরে সরে এসে নতুন ভাবে আর্থ-সামাজিক বিকাশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন লুপ্তপ্রায় জনজাতি রাভা সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
সম্প্রতি রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের অনুমোদনে ও আর্থিক সাহায্যে জলপাইগুড়ি জেলার মোরাঘাট জঙ্গল লাগোয়া বনবস্তি –মেলাবস্তি ও মোঙ্গলকাটা বনবস্তিতে গড়ে উঠছে এই হোম –স্টে গুলি। নিজেদের জমিতে সরকারি অনুমোদন নিয়ে হোম-স্টে গুলি তৈরি করেছেন রাভারা।যাদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করছে পর্যটন দপ্তর। ইতিমধ্যেই সরকারি আর্থিক সাহায্যের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে হোম-স্টে নির্মানের কাজ অনেকেই শেষ করে ফেলেছেন।
হোম –স্টের মালিক ডাউদ রাভা জানান, ‘ জঙ্গলের পাশে থেকে বনদপ্তরের কাজ করে আমরা পুর্ব পুরুষের সময় থেকে দিন গুজরান করে আসছি। এখানে আয়ের তেমন সুযোগ না থাকায় কিছু মানুষ গাছ কাটার মত বেআইনি পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তবে আশা রাখি সরকার আমাদের এখানে এতগুলি হোম-স্টে নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে তাতে অনেকেই মূলস্ত্রোতে ফিরে আসবেন ও আমাদের এলাকায় আর্থ –সামাজিক উন্নয়ন হবে।
পর্যটন ব্যাবসায়ী তমাল গোস্বামী বলেন, মোরাঘাট জঙ্গলের কোলে গড়ে ওঠা এই হোম- স্টে গুলি পারিপার্শ্বিক শান্ত- সুন্দর পরিবেশের জন্য ডুয়ার্সের বুকে পর্যটনের নতুন দিশা তৈরি করবে বলে আশা রাখি। আমাদের একটি সুন্দর সংস্কৃতি ও নৃত্য শৈলী আছে। এখানে পর্যটকরা এলে জঙ্গল তো বটেই আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ও অবগত হতে পারবেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Dooars, North Bengal, Tourism