#কোচবিহার : আছে কাঁটাতারের বেড়া। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। বিএসএফের ক্রমাগত টহলদারি। তবুও মিলেমিশে একাকার দুই দেশ। ভারত ও বাংলাদেশ। আছে অনুপ্রবেশ নিয়ে তরজা। হয়তো থাকবেও। তবে সে সব যে ফাটল ধরাতে পারেনি দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে তার জ্বলন্ত উদাহরণ তিনবিঘা করিডর। ভারতীয় রাস্তার দুই প্রান্তে বাংলাদেশের তিনটি গ্রাম। দহ গ্রাম, অঙ্গরপোতা আর পাটগ্রাম।
আরও পড়ুন : আকাশ ঘন কালো! দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টির জোরালো সম্ভাবনা একটু পরেই
বাংলাদেশের লাগোয়া এই গ্রামগুলিতে যাতায়াত করতে গেলে একমাত্র ভরসা ভারতের পথ। ইন্দো-বাংলা সীমান্তের দুই দেশে যাতায়াতকারীদের পারাপার করতে মোতায়েন BSF । ভারতীয় পথ ছুঁয়ে যখন বাংলাদেশের নাগরিকরা নিজেদের দেশে, গ্রামে যাতায়াত করেন তখন ভারতীয় নাগরিকদের যাতায়াতের রাস্তা সাময়িক বন্ধ রেখে বিএসএফের জওয়ানরা এই তিন বিঘা করিডর দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের পারাপারে সাহায্য করেন।
বাংলাদেশের নাগরিকদের যাওয়া-আসা সম্পন্ন হলেই খুলে দেওয়া হয় তিন বিঘা করিডরের ভারতীয় পথ। এরপর বাংলাদেশের নাগরিকদের যাতায়াত সাময়িক বন্ধ রেখে ভারতীয়দের অনুমতি মেলে যাতায়াতের। এই সময় একদিকে যেমন বিএসএফের কড়া নজরদারি। অন্যদিকে কার্যত ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় বিএসএফ জওয়ানরা। কার্যত দ্বৈত ভূমিকায় এখানে দেখা মেলে বিএসএফ জওয়ানদের।
তবে বাংলাদেশের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতের সময় ভারতের মাটি ছুঁয়ে যাতায়াত করলেও অনুমতি নেই ভারতে প্রবেশের। উত্তরবঙ্গের সেই তিন বিঘা করিডরে পৌঁছে গিয়েছিল নিউজ এইট্টিন বাংলা। যেখানে ভারতীয় পথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করছেন নাগরিকরা। বিএসএফের কড়া নজরদারি।
এই করিডর লাগোয়া কাঁটাতারের বেড়া। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। সবই আছে। বাংলাদেশের নাগরিকরা কেউ হেঁটে, কেউ বাইকে , কেউবা টোটো রিক্সা করে যাতায়াত করছেন ভারতের করিডোর ব্যবহার করে। ভারতীয় পথে এখানে বিভিন্ন যানবাহনে দেখা মিলছে বাংলাদেশের রেজিস্ট্রেশন ভুক্ত নাম্বার প্লেট। গাছগাছালিতে ভরা বিএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন এই তিন বিঘা করিডরে দেখা মিলল বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে লাগানো গাছ। ঠিক তার পাশেই ভারতের মাটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বৃহস্পতিবার এই তিন বিঘা করিডর পরিদর্শনের সময় করলেন বৃক্ষরোপণ।
কাছাকাছি- পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ। এ যেন দু'দেশের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক। তিনবিঘা করিডোর হল একটি স্বতন্ত্র ভূমি যা ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। এটি উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। ১৯৭৪ এর ১৬ইমে এর ইন্দিরা গান্ধি-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর (১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু)) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর (৭.৩৯ বর্গকিলোমিটার (২.৮৫ বর্গমাইল)) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এরফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। যদিও ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেনি।পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে এটি বাংলাদেশকে দেওয়ার বদলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা হিসাবে দিয়েছিল এই শর্তে যে, ভারতের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। আজও তিনবিঘা করিডর ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবুও ভারত-বাংলাদেশ এখানে মিলেমিশে একাকার।
ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।