Uttam Paul
#ইসলামপুর: পণের টাকা দিতে না পারায় আত্মঘাতী হলেন ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। পুলিশের কাছে মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে ওই মহিলার স্বামী-সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ইসলামপুর আগডিমটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুবস্তি গ্রামে। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ইসলামপুর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে মৃতার পরিবার।
জানা গিয়েছে, মাস আটেক আগে ইসলামপুর থানার আগডিমটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুবস্তি গ্রামের বাসিন্দা আজমিরা বেগমের সঙ্গে মুসলমান শাস্ত্র মতে মোহর হয় বাঁশবাড়ির গ্রামের বাসিন্দা পারভেজ আলমের। মোহরে পণ হিসেবে তিন লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ঠিক হয়েছিল। পণ বাবদ অগ্রিম এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। মোহর হয়ে যাওয়ার পর আজমিরা এবং পারভেজের মধ্যে মেলামেশা এবং সহবাস হয় বলে অভিযোগ। সহবাসে আজমিরা ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন।
আজমিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরার পর আগামী ৩ মার্চ বিয়ের দিন ঠিক করেন আজমিরার পরিবার। পারভেজ আলমের পরিবার পণের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিয়ে দিতে রাজি হয় না। পারভেজের পরিবার এই দাবি জানানোর পর আজমিরার পরিবার বসতবাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বসতবাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন সেই জমি সরকারি ভেষ্ট জমি। সেই জমি বিক্রয়যোগ্য নয়। সেটা জানার পর চরম সমস্যায় পড়েন আজমিরার পরিবার।
অন্যদিকে, আজমিরার গর্ভস্থ সন্তান অস্বীকার করেন পারভেজ আলম। পারভেজের এই সিদ্ধান্ত জানার পর আজমিরার পরিবার ভেঙ্গে পড়ে। এক দিকে অন্তঃসত্ত্বা, অন্যদিকে বিয়ে হবে কি না এই অনিশ্চিয়তা তৈরি হওয়ায় গতকাল রাতে বাড়িতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আজমিরা আত্মহত্যা করেন। আজ সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনা জানাজানি হতে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ইসলামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ইসলামপুর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। মৃতার দাদা নূর আলম ইসলামপুর থানায় পারভেজ আলম সহ পরিবারের ছয়জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মৃতার আত্মীয় মৈলানা সাজ্জাদ আলম জানান, আট মাস আগে দু’জনের মোহর হয়েছিল। তিন লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা পণ দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অগ্রিম হিসেবে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা দেবার পরও বাকি টাকা দিতে পারেনি। এই আট মাস সময়ে আজমিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন। আগামী ৩ মার্চ বিয়ের দিন ঠিক হওয়া সত্বেও আজমিরার পরিবার পণের বাকি টাকা জোগাড় করতে পারেনি। মোহরের পর আটমাসের মধ্যে আজমিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পণের টাকা না পেয়ে পারভেজের পরিবার বিয়ে করতে অস্বীকার করায় হতাশায় ভেঙে পড়েন। সেই হতাশা থেকেই আজমিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। সাজ্জাদের দাবি যারা আজমিরার মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। এ ছাড়াও বিয়ের জন্য পণপ্রথার বিলুপ্তের দাবি করেছেন তিনি।