দক্ষিণবঙ্গ: সুদূর রাজস্থান থেকে বাড়ির উঠোনে এসে পৌঁছল বাবার নিথর দেহ। তখন ওর পরনে স্কুল ড্রেস। হাতে ব্য়াগ। আজও তো ওর পরীক্ষা। কিন্তু, চোখ তো থেকে থেকেই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আবারও হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে সে। দৃষ্টি স্পষ্ট করে নিচ্ছে। এখন তো ওর অনেক বড় কাজ বাকি। বাবার মুখাগ্নি করতে হবে। তারপরে যেতে হবে পরীক্ষা দিতে। জীবনের এত বড় একটা পরীক্ষা উচ্চ মাধ্যমিক, আর সেই পরীক্ষার মাঝেই হাবড়ার বেলেডাঙা গ্রামের ছাত্রী ভাগ্যশ্রীর জীবনে নেমে এল হঠাৎ অন্ধকার।
ভাগ্যশ্রীর বাবা অনিমেষ মণ্ডল গত ১২ বছর ধরে রাজস্থানের উদয়পুর এলাকায় হাতুড়ে ডাক্তারের কাজ করতেন। স্ত্রী-সহ দুই মেয়ে থাকতেন হাবড়া-১ ব্লকের মছলন্দপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলেডাঙা গ্রামের বাড়িতে। বড় মেয়ে ভাগ্যশ্রী মণ্ডল এবছর উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে। ছোট মেয়ে দিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা।
জানা গিয়েছে, গত ১৫ মার্চ, বুধবার রোগী দেখতে বেরিয়েছিলেন অনিমেষ। সেই সময় পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে ভর্তিও করানো হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। গত ১৭ মার্চ শুক্রবার, পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে অনিুমেষের। পরে মৃত্যু।
সোমবার সকালে অনিমেষ মণ্ডলের নিথর দেহ ফেরে বাড়িতে। প্রিয় মানুষকে এভাবে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। কিন্তু, সবাই ভেঙে পড়লেও বুকের চাপা কান্না লুকিয়ে রেখে শ্মশানে বাবার মুখাগ্নি করে ভাগ্যশ্রী। তারপরে চলে যায় ইতিহাস পরীক্ষায় দিতে। চাতরা নেতাজি বালিকা শিক্ষা নিকেতনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাগ্যশ্রী। এ বছর তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে মছলন্দপুর ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন: সাতসকালে এ কী কাণ্ড! রেল স্টেশনের টিভিতে অ্যাডাল্ট ফিল্ম! টানা ৩ মিনিট চলল 'নীল ছবি'
এই অবস্থায় অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, মছলন্দপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাপস কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, "পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন অনিমেষ। সেই মানুষটাকে হারিয়ে এখন গোটা পরিবারটাই অসহায়। দুই বোনের যাতে পড়াশোনায় কোনও অসুবিধা না হয়, তা দেখব। পরিবারের পাশে থাকাব।"
জুলফিকার মোল্যা
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।