আজ ১২ই সেপ্টেম্বর, সারাদেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস বা ওয়ার্ল্ড ফার্স্ট এইড ডে। আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ২০০০ সাল থেকে এই দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের সূচনা ঘটায়। প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে জীবন বাঁচায় এবং প্রাত্যহিক জীবনে নানা সংকট থেকে রক্ষা করে সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়েই এই ভাবনার উদ্ভব।এই বছরের এই দিবসের থিম হল ‘First aid saves lives’('প্রাথমিক চিকিত্সা জীবন বাঁচায়')। অনুমোদিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বাইরে জীবনরক্ষার যে প্রাথমিক পদ্ধতি তাই প্রাথমিক চিকিৎসা।ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কমিয়ে আনা। এই দিন পালনের মূল লক্ষ্য হল সবার সামনে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণকে তুলে ধরা।
এ জন্য ফার্স্ট এইড বক্সের কিছু উপকরণের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। আমাদের দেশে ফার্স্ট এইড বক্স পরিচিত হলেও প্রশিক্ষণ বা সেই জরুরি মুহূর্তে করণীয় বিষয়গুলো খুব একটা পরিচিত নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তা কখনো কখনো সুফল বয়ে আনে বা কারও জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করে। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে কারও ভালো জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ থাকলে সে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোনো অসুস্থতা বা আঘাতের পর করণীয় ঠিক করতে পারে; যা জীবন রক্ষা করতে পারে। বাড়িতে একটি ফার্স্ট এইড বক্স থাকলে তা কাজেই লাগবে।ফার্স্ট এইড বক্স হলো একটি বহনযোগ্য বক্স। এতে অনেক কিছুই থাকতে পারে। যেগুলো নিয়ে প্রাথমিকভাবে ছোটখাটো দুর্ঘটনার মোকাবিলা করা যাবে। যাতে একজন মানুষ কোনোভাবে আহত বা হঠাৎ করে অসুস্থ হলে তাকে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়। কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, এখন কী করতে হবে রোগীর জন্য। আবার কিছু থাকে, যা দিয়ে প্রাথমিকভাবে অবস্থা সামাল দিয়ে কিছু সময় পাওয়া যায়, যেটা ব্যবহার করে দুর্ঘটনায় পড়া মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
রোগীর জীবনরক্ষার পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে সমসাময়িক ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে অবস্থার অবনতি রোধ করা, সম্ভব হলে উন্নতি করাই এর লক্ষ্য। নির্ধারিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক অসুস্থ্যতার চিকিৎসা বা শুশ্রষা করে নিরাপদে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়াই প্রাথমিক চিকিৎসা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া বা পৌঁছানো পর্যন্ত যাতে রোগীর মারাত্মক কোন অসুবিধা না হয়, শারীরীক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে, সাধারণভাবে নির্ভরতার সাথে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করাই প্রাথমিক চিকিৎসার অর্ন্তভুক্ত। একজন আহত, অসুস্থ ব্যক্তির জীবন-মরণ বহুলাংশে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর নির্ভর করে।
প্রাথমিক চিকিত্সার ইতিহাস ১৬০ বছরেরও বেশি পুরানো। সলফ্রিনো (১৮৫৯) এর যুদ্ধে হেনরি ডুনান্ট নামে এক ব্যবসায়ী সেখানে ছিলেন ,সেখানকার হত্যালীলার সাক্ষী হন। তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মেমোয়ার্স অফ সলফ্রিনো, নামে একটি বই লেখেন , সেই বইতে ডুনান্টের ধারণার ভিত্তিতে আইসিআরসি নামক একটি স্বাধীন সংস্থা গঠনের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে সৈন্যদের যত্ন নেওয়ার জন্য।পরে, তিনি রেড-ক্রসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন।উনিশ শতকে তাঁর আবিষ্কার থেকে আজ অবধি মানুষের দুর্দশা বর্তমান। যুদ্ধের আঘাত থেকে প্রতিদিনের রাস্তায় এবং পারিবারিক দুর্ঘটনা পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিত্সা গুরুত্বপূর্ণ।টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ২৭% মৃত্যুর কারণ হ'ল চিকিত্সা না দেওয়া। ডেভেক্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আঘাতের এক ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রাথমিক যত্ন দেওয়া হয় তবে প্রায় ৫০% সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনা রোধ করা যায়। সঠিক সময়ে প্রাথমিক চিকিৎসা একটি জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: First Aid