#ত্রিপুরা: বাংলায় পর্যুদস্ত হতে হয়েছে বিজেপিকে, আর তারই রেশ ধরে শোরগোল পড়েছে ত্রিপুরায়। মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফিরে আসার প্রেক্ষিতে ত্রিপুরার ক্ষমতাশালী বিজেপি নেতা সুদীপ রায় বর্মনের হাত ধরে বিজেপিতে বড় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখেই বিএল সন্তোষের নেতৃত্বে তিন কেন্দ্রীয় নেতা ত্রিপুরায় গিয়ে সুদীপ শিবিরের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। যদিও ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতা আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে সরব সুদীপ রায় বর্মন ও তাঁর অনুগামীরা। ২০১৯-এ দিল্লি গিয়ে বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে করেছেন 'বিরোধী' নেতারা। কিন্তু তখন তেমন ব্যবস্থা না হলেও বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরার দল ও সরকারে বেশ কিছু পরিবর্তন যে হবে, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের কাছে একটি রিপোর্টও জমা পড়েছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ত্রিপুরার দুটি লোকসভা আসন নয়, বরং বিজেপির কাছে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ হল গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে জিতে আসার পরই উত্তর-পূর্বে আলাদা নজর দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা। উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য ছাড়াও বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডও বরবার বিজেপির নিশানায় থেকেছে। এই গোটা অঞ্চলের অন্তত ১৩০ লোকসভা আসনের দিকেই নজর রয়েছে বিজেপির। পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবি হলেও উত্তরপূর্ব ও পূর্ব ভারতের দিকে বিজেপির নজর একচুলও কমেনি। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, 'অসম ও ত্রিপুরায় আমরা এখন দলকে প্রসারিত করছি। পূর্ব ভারত বিজেপির ইকোসিস্টেমের মধ্যেই রয়েছে।' আর তৃণমূল যখন উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির দিকেই প্রথম তাক করছে, তখন বিজেপিও এই জায়গায় তাঁদের ঘর গোছাতে চলেছে।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপিকে থামিয়ে দিতে পারেন। বাংলার কার্পেট বোম্বিং করেও ক্ষমতা দখল করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। বরং বিরাট সংখ্যক আসন পেয়ে ফের সরকার গড়েছেন মমতা। সেই মমতার চোখ এখন ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'আমরা যেখানে যাব, সেখানেই আমরা বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠব।' সেই সূত্রেই পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আগ্রাসী হয়ে প্রচারে নামছে তৃণমূল। আর সেই কারণে তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ছুটে যেতে হয়েছে ত্রিপুরায়। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের কথায়, 'আমাদের নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বিজেপিকে। কিন্তু এখন ত্রিপুরায় ওঁরা নিজেদের ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।'
২০১৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি লোকসভায় যে আসন পেয়েছে, তা মূলত পশ্চিম, মধ্য ও উত্তর ভারত থেকে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকেই তাঁদের নজর গিয়ে পড়েছে উত্তর পূর্ব ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির উপর। তার মধ্যে অসমে তাঁরা সফল, কিন্তু বাংলায় ব্যর্থ।
চিনের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বেজায় খারাপ হয়ে উঠেছে। সেই কারণে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সীমান্ত পরিকাঠামোয় আরও জোর দিয়েছে তাঁরা। কিন্তু আসল লক্ষ্য, দলের ক্ষমতা ধরে রাখা। সেখানেই বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে তৃণমূল। পরিস্থিতি বুঝে তাই আগ্রাসী হয়ে উঠতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে।
----কমলিকা সেনগুপ্ত
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।