#চামোলি: ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে দিনের খাতে, গুনতে গুনতে চলে গিয়েছে একটা গোটা সপ্তাহ! কিন্তু উত্তরাখণ্ডের হড়পা বানে নিখোঁজ হওয়া আনুমানিক ২০০ জনের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে কেবল ৩৮টি দেহ। এর মধ্যে দু'জন ব্যক্তিকে পাওয়া গিয়েছে জীবন্ত অবস্থায়। তাই দাঁতে দাঁত চেপে প্রহর গুনছে উত্তরাখণ্ডের একাধিক পরিবার। সেই সব পরিবার যেমন সদস্যদের ফিরে পাওয়ায় আশায় দিন গুনছেন, ঠিক তেমন করেই অপেক্ষা করে চলেছে রৈনি গ্রামের ঋষিগঙ্গা পাওয়ার প্ল্যান্টের কাছে থাকা এক নামহীন খয়েরি রঙের মাদী কুকুর। শাবকদের ফিরে পাওয়ার আশায় এখন তার ভরসা কেবল উদ্ধারকর্মীরাই!
জানা গিয়েছে যে রবিবার সকালেও উদ্ধারকর্মীরা পাঁচটি দেহ খুঁজে বের করতে পেরেছেন। এদের মধ্যে দু'টি দেহ উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার রৈনি গ্রামবাসিন্দার। বাকি দেহগুলি NTPC-র তপোবন-বিষ্ণুগড় হাইডেল পাওয়ার প্রোজেক্টের ৩০ জন কর্মীর মধ্যে তিনজনের বলে অনুমান করা হচ্ছে, যাঁরা হড়পা বান নেমে আসায় একটি সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন, সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে ওই সুড়ঙ্গেই খুব সম্ভবত আটকে পড়েছে তিন বা চারটি সারমেয়-শাবক। ৭ ফেব্রুয়ারি, রবিবার এই ঘটনা ঘটে। তার পর থেকে একটানা ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রয়েছে মা-কুকুরটি, অপেক্ষা করছে সন্তানদের উদ্ধারের।
গ্রামবাসীরা আরও জানিয়েছেন যে এই কয়েক দিনে কুকুরটিকে খাবার বা জল কিছুই খাওয়ানো যায়নি। বেশিরভাগ সময়টাই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে উদ্ধারকর্মীদের কাজ দেখে। মাঝে মাঝে এগিয়ে গিয়ে মাটি শোঁকে, থাবা দিয়ে মাটি খোঁড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। কখনও বা সে একদৌড়ে চলে যায় নদীর পাড়ে, কখনও কখনও পাহাড়চূড়ায় উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে শাবকদের খোঁজার চেষ্টা করে, পরিস্থিতি দেখে যায়। তবে রাত নামলেও সে ওই জায়গা থেকে কোথাও যায় না, সেখানেই ঠায় বসে বা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করে চলে হারিয়ে যাওয়া শাবকদের জন্য।
দিগম্বর নামে রৈনি গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন যে হড়পা বানে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তাঁর ভাইও! তাঁর মেনে নিতে মন চাইছে না যে ভাই আর ইহলোকে নেই। দিগম্বরের আশা, উদ্ধারকর্মীরা যেভাবে দু'জন ব্যক্তিকে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছেন, সে রকম ভাবেই খুঁজে পাবেন তাঁর ভাইকেও। মা-কুকুরটিও দিন গুনছে একই প্রত্যাশা বুকে নিয়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় একখাতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পশু আর মানুষকে। কিন্তু আশার আলো এখনও দেখতে বাকি!