#উত্তরাখণ্ড: রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় নন্দাদেবী হিমবাহ ভেঙে তুষারধস নামে। প্রবল জলের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঋষিগঙ্গা নদীর উপরে অবস্থিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ধুয়ে মুছে যায় ওই এলাকার একাংশ। ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়, উদ্ধারকাজ চলছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। নিখোঁজ ১৭৪ জন।
কয়েকবছর আগেও উত্তরাখণ্ড এমনই এক ভয়াবহ বিপর্যয় দেখেছে। এই ঘটনার পর থেকে, এই দুই ঘটনা মিলিয়ে বহু মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, কেন এই রাজ্যে বার বার এমন ঘটনা ঘটছে? যার উত্তরে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। কেউ এই বিষয়টিকে পুরোপুরি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলছেন, তো কেউ একেবারেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলতে নারাজ।
পরিবেশবিদদের বেশিরভাগই এই বিষয়টিকে মনুষ্যসৃষ্ট বা ম্যানমেড ডিসাস্টার বলছেন। অনেকে আবার প্রাকৃতিক নানা ঘটনাকে দায়ী করছেন। যার পিছনে একাধিক তত্ত্ব দেখাচ্ছেন তাঁরা-
১) জলবায়ু পরিবর্তন-- তুষারধস নামা খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু হিমবাহ ফেটে তুষারধস সাধারণত হয় না। হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক অঞ্জল প্রকাশ জানাচ্ছেন, এই ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এমন হয়েছে। তিনি বলেন, '' এই বিষয়টির উপরে আমাদের আরও অনেকটা পরীক্ষা করতে হবে এবং আবহাওয়ার রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। তার পরই এর কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাবে।'' আরেক অধ্যাপক মহম্মদ ফারুখ আজম জানান, যেদিন ঘটনাটি ঘটে সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত চামোলি এলাকায় আবহাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে। রোদও স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে।
২) গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড-- তুষারধস ও জলপ্রবাহের কারণ হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞ প্রথমে হিমবাহের কোনও এক অংশের ধস ও তা নদীর জলে পড়াকে দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, এমন হতে পারে, বরফের চাঁই নদীর জলে পড়ে সেখান থেকে হড়পা বান তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরে তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, এটা কোনও বরফের চাঁই পড়া থেকে তৈরি হয়নি। এটা ছিল গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (হিমবাহ ঘেরা কোনও লেকের জল যখন উপচে পড়ে তখন গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট হয়), যা থেকে হড়পা বানের পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও এর সাপেক্ষেও সমস্ত যুক্তি প্রমাণিত নয়।
৩) হিমবাহের কোনও অংশের বরফের চাঁই ভেঙে পড়া-- এই ঘটনার পরই The Geological Survey of India জানায়, গ্লেসিয়াল আউটবার্স্ট হয়েছে নন্দাদেবীতে গ্লেসিয়াল কেভিং থেকে। এই গ্লেসিয়াল কেভিং হল হিমবাহের কোনও অংশের বরফ হঠাৎ ভেঙে পড়া। এর থেকে এর আগেও অনেকবার হড়পা বানের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবারও তাই হতে পারে। GSI-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্লেসিয়াল কেভিং হয়েছে ঋষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা এলাকায়। তবে, NDTV-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে GSI প্রধান দীনেশ গুপ্ত জানিয়েছেন, কী কারণে রবিবার এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার এখনই সময় নয়। এর জন্য কমিটি তৈরি হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করছেন।
৪) রেডিওঅ্যাক্টিভিটি
যে এলাকায় রবিবার এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ও তার আশেপাশে একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে। যার ফলে রেডিওঅ্যাক্সিভিটি ও বরফে কাজ চলার ফলে এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছেন রেনি গ্রামের বাসিন্দারা। এই গ্রামেরই একটা বড় অংশ তলিয়ে যায় ওই দিনের ঘটনায়। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। Times of India-র রিপোর্ট বলছে, ১৯৬৫ সালে নন্দাদেবীতে ভারতীয় সেনা নিউক্লিয়ার পাওয়ার সার্ভিলেন্স ডিভাইজ বসানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যাঁরা সেই ডিভাইজ নিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা ব্যর্থ হন। এবং হিমবাহের মাঝে সেই ডিভাইজটি রেখে তাঁদের ফিরে আসতে হয়। এখন রেনি গ্রামের একাংশের বিশ্বাস, সেই যন্ত্রটি থেকেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।
৫) ধস
দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকার স্যাটেলাইট ছবি দেখে গবেষকরা দাবি করেন, ধস থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। নন্দাদেবী হিমবাহ ভেঙে ধস ও তা থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এতগুলো কারণ রবিবারের উত্তরাখণ্ড বিপর্যয়ের পিছনে উঠে আসলেও কোনওটাতেই এই মুহূর্তে সিলমোহর দিতে রাজি হননি কেউ। কী কারণে এই ঘটনা, সে নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি প্রশাসনও!
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Uttarakhand