আবীর ঘোষাল, আগরতলা: ত্রিপুরার রাজপরিবারের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৷ একাধিকবার ত্রিপুরায় এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ তাঁর সাহিত্যের একাধিক লেখায় উঠে এসেছে ত্রিপুরা। সেই ত্রিপুরাতেই চলতি বিধানসভা ভোটে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শাসক দল হোক বা বিরোধী, ভোট প্রচারে বারবার উল্লেখ করেছেন কবিগুরুর নাম ৷ সংস্কৃতি বা হেরিটেজকে ইস্যু করেছে ত্রিপুরার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আর তারই মাঝে উঠে এসেছে কুঞ্জবনের নাম।
রাজাদের এই প্রাসাদে একসময় থেকেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর আজ সেখানে গিয়ে পৌঁছলে দেখা যাবে, বাড়ি সম্পূর্ণ ভগ্নপ্রায়। ধূলোর মোটা আস্তরণ জমে গেছে। কোথাও ভাঙা জানলা। কোথাও আবার বারান্দা ঝুলে পড়েছে ৷ রংচটা সেই প্রাসাদ দেখলে কে বলবে এই বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব।
বাড়ির সামনের অংশ এখন বিয়েবাড়ি হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়। তাদের রঙিন কাপড় বাড়ির ভগ্নপ্রায় দশাকে আরও বেশি করে মনে করিয়ে দেয় ৷ বাড়ির মালিকানা এখনও রাজপরিবারের হাতে বলে স্থানীয়দের দাবি ৷ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বপ্রথম ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আগরতলায় আসেন। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মহারাজ বীরচন্দ্রের আমল থেকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার যোগাযোগ শুরু হয়েছিল। বিশ্বকবি সাত বার আগরতলায় আসেন ৷ ত্রিপুরার রাজার সঙ্গে এবং রাজবংশের সঙ্গে কবিগুরুর সম্পর্ক দারুণ ছিল। মহারাজ বীরচন্দ্র , রাধাকিশোর , বীরেন্দ্রকিশোর এবং বীরবিক্রমের সঙ্গে কবিগুরুর গভীর সম্পর্ক ছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তৎকালীন মহারাজাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি , সংগীত , নৃত্যকলা প্রসারে শুভ ও সৎ পরামর্শ দিতেন। ত্রিপুরায় আসলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকতেন যে কয়েকটি জায়গায়, তার মধ্যে অন্যতম ‘কুঞ্জবন’।
কৈলাসচন্দ্র সিংহের সহযোগিতায় রবীন্দ্রনাথ ‘রাজর্ষি’, ‘মুকুট’ নামক ঐতিহাসিক উপাখ্যান রচনা করেন। 'প্রেম মরীচিকা’, ‘আকাশ কুসুম’, ‘বিসর্জন’,’উচ্ছ্বাস ও সোহাগী’ এবং ‘ভগ্নহৃদয়’ ত্রিপুরার বিখ্যাত অধ্যায়।১৯১৩ সালে সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। বীরেন্দ্র কিশোর রবীন্দ্রনাথকে আগরতলার উমাকান্ত অ্যাকাডেমিতে ‘কবি সংবর্ধনা’ জ্ঞাপন করেন। ত্রিপুরার সর্বশেষ মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য কবিগুরুকে ‘ভারত ভাস্কর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এমনকী, শান্তিনিকেতন ও ত্রিপুরার মধ্যে দারুণ যোগসূত্র ছিল। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে ত্রিপুরার অনেক কৃতি সন্তান বিশ্বভারতীতে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
শান্তিনিকেতনের উন্নয়নে বীরবিক্রম মাণিক্য মুক্ত হস্তে অর্থ দান করেন।ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে ভগ্ন প্রাসাদ, সেখানেই থেকেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে হেরিটেজ, সংস্কৃতি একটা অন্যতম ইস্যু। তাই কুঞ্জবনে যাওয়া ৷ বিরোধীরা বলছেন হেরিটেজ বা ইতিহাস বাঁচাতে সরকার আগ্রহী নয় ৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, হেরিটেজ বা ইতিহাস নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Rabindranath Tagore, Tripura