ভারতীয় পরিকাঠামোয় কোপ! কৃষি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে দেশের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে
OPINION | ভারতীয় পরিকাঠামোয় কোপ! কৃষি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে দেশের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে
সম্প্রতি সারা দেশে রিলায়েন্সের কিছু টেলিফোন টাওয়ার ভাঙচুড় করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, ভারতের উপর আঘাত হানলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে? আঙুল উঠছে চিনের দিকে।
#নয়া দিল্লি: সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক চলে এসেছে। আধুনিক যুগে এই সম্পর্ককে কিছুটা হলেও জোরদার করেছে ভারতের বামপন্থী মনস্ক মানুষেরা। করোনার দাপট বাড়তে থাকলে চলতি বছর মার্চ থেকেই চিনকে চিহ্নিত করা হয় অতিমারির কেন্দ্র হিসেবে।তখন থেকেই ভারত চিন সম্পর্কে চির ধরে।আন্তর্জাতিক সীমারেখা লঙ্ঘন করে চিন ভারতে ভূখন্ড দখল করার চেষ্টা করলে লাদখের গালওয়ান্ত সীমান্তে যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে প্রাণ হারায় বহু ভারতীয় সেনা। এর ফলে চিনা অ্যাপ থেকে শুরু করে বহু ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানি করার নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত সরকার। ভারতীয়দের বুকে গড়ে ওঠা চিনকে ঘিরে এই বিদ্বেষ পরে এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যাদের ঘরে চিনা কোম্পানির টেলিভিশন, মোবাইল ছিল সেগুলো সবই আজ চলে গেল বাতিলের খাতায়।এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারতের রিলায়েন্স ডিজিট্যাল কোম্পানি, তাঁদের একচেটিয়া ব্যবসাকে একটি সুবৃহৎ বাজারে পরিণত করার চেষ্টা করে। মুকেশ আম্বানি চলতি বছর অক্টোবর মাসে জানান, খুব শীঘ্রই ভারতীয়রা ৫জি ইন্টারনেট সার্ভিস পেতে চলেছেন। অন্যদিকে, আমেরিকা বা ব্রিটেনের মতন প্রথম বিশ্বের দেশ গুলিতে ৫জি পরিষেবা শুরু হয়ে গিয়েছে।এখন প্রশ্ন হল এই ৫জি পরিষেবার তাৎপর্য কী?
একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেট পরিষেবা হল বিশ্বের সবেচেয়ে বড় টেকনোলজি, যার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বসে যে কোনও বিষয় সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ভারতে প্রাইভেট টেলিকম কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম হল রিলায়েন্স জিও। এত দিন প্রাইভেট টেলিকম সার্ভিসগুলি থ্রিজি এবং ফোরজি’র মতো ইন্টারনেট পরিষেবা ভারতীয় গ্রাহকদের দিয়েছে। প্রথম বিশ্বের দেশ গুলিতে ৫জি আসায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতেও ৫জি ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫জি মানেই আরও সহজে দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা এবং ৫জি মোবাইলের বাজারবৃদ্ধি।মজার বিষয় হল, রিলায়েন্স জিও কোম্পানি কম টাকায় বেশি ডেটা ব্যবহার করার মতন সুযোগ দিচ্ছে। অথচ এ দেশে আজও দামি মোবাইল কেনার মতন ক্ষমতা বহু মানুষেরই নেই। অন্যান্য টেলিকম কোম্পানির ডেটা সার্ভিস কেনার সামর্থ্য এবং তাদের দেওয়া সুযোগ সুবিধে গুলোতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ভারতের সাধারণ মানুষ। এ দেশের সাধারণ গ্রাহকদের জন্য আমেরিকার কোয়ালকমের সঙ্গে জিও হাত মিলিয়ে ৫জি ইন্টারনেট পরিষেবা আনার কথা পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু জানা যাচ্ছে যে হঠাৎই সারা দেশে জিও’র কিছু টাওয়ারে ভাঙচুড় চালানোর ফলে তাঁদের এই পরিকল্পনা ব্যহত হয়।এত বছর চিন, এ দেশকে টেলিফোনিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। চিন ভারত সম্পর্কে ফাটল দেখা দিতেই ভারতের সাধারণ নাগরিকেরা চিনের দ্বারা প্রভাবিত কোনও ধরণের টেকনোলজিক্যাল সংক্রান্ত সুবিধা গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করে। ঠিক সেই সময় রিলায়েন্স আশা দেখায় আমেরিকার সহযোগিতায় ৫জি পরিষেবাকে নিয়ে আসার। এই প্রথম বোধ হয় ভারতীয় কোনও সংস্থা বা কোম্পানি নিজের হাতে নিতে চলেছে টেলিফোনিক পরিষেবা। এটি খুবই গর্বের একটি বিষয়।সম্প্রতি সারা দেশে রিলায়েন্স জিও’র প্রায় ১৫০০টি মোবাইল টাওয়ার এবং আইফোন ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ভারতের উপর আঘাত হানলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে? এ বিষয় ভারতের নিজস্ব টেলিকম পরিষেবায় জল ঢেলে দিতে পারার মতন ক্ষমতা রাখে একমাত্র চিন। এই ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকলে বিদেশি বিনয়োগকারীরা সহজেই ভারতের উপর তাদের আস্থা হারাবে। এখন প্রশ্ন হল এই ভাঙচুর কি পূর্ব নির্ধারিত নাকি কৃষি আন্দোলনের যথেচ্ছ প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ? প্রশ্ন হল এই যে ভারতের অন্যতম কোম্পানি রিলায়েন্স জিও’র নাম খারাপ করার বিষয় কার ভূমিকা রয়েছে? সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে দেশের সুরক্ষার প্রশ্নটিও।সাম্প্রতিক কালে জারি হওয়া নতুন কৃষিবিল হয়ে উঠেছে যাবতীয় অশান্তির কারণ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিলায়েন্সের মতন কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি। এত কাল ধরে কৃষি শিল্পের ভিত্তি ছিল সামন্ততান্ত্রিক। এই ব্যবস্থায় একচেটিয়া লাভ করত মধ্যবর্তী মহাজনেরা। এই কারণেই কৃষকদের ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি বা ফুড এক্সপোর্টার্সদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকত না। বর্তমানে এই আন্দোলনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি তাদের মুনাফা লাভ করতে চাইছে।কৃষি বিদ্রোহকে হাতিয়ার বানিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভারতের জাতীয় সম্পদ নষ্ট করার চেষ্টা করছে যা কোনও ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। রাজনৈতিক বিবাদের জের এ বার প্রভাবিত করতে চলেছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও। যার সুযোগ অনায়াসেই নিতে পারে চিনের মতো দেশ।২০১৪ সালে মোদি সরকার আসার পর অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে যা ঘটছে তা সত্যিই চিন্তার। একদল লোক টাওয়ার ভেঙে দেওয়া থেকে শুরু করে পথ অবরোধের মতন কাজ করে যাচ্ছে। ফলে এই কঠিন পরিস্থিতির সুযোগ করে নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করে নিতে চাইছে চিন।যদি ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সত্যিই গ্রামীণ ভারতের প্রতি যত্নশীল ও শ্রদ্ধাশীল হয়, তবে তাদের বুঝতে হবে যে নির্বোধ প্রতিবাদের নামে কাঠামোগত ধ্বংসের সাক্ষী না হয়ে ভারতীয় কৃষিতে বিনিয়োগ করার সময় এসেছে। মোদি সরকারের বিরোধিতা করার নামে, কিছু দল অজান্তেই চিনকে সমর্থন করছে। এখন সময় এসেছে বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব সহ বিবেচনা করার।
Published by:Somosree Das
First published:
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।