#চেরাপুঞ্জি: মেঘালয় শব্দটা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে সবুজ অরণ্য। মাঝে ছোট ছোট লেক। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে এই ছবিতে পরিবর্তন আসছে। বন-জঙ্গল কেটে বহুতল তৈরি বা কারখানা তৈরি শুরু হয়েছে এই রাজ্যে। যার ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়তে পারে এবং তার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে পারে জলদূষণও। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে পরিবেশের উপরে। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে তাই বনাঞ্চল বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছেন এক আদিবাসী ব্যক্তি। মেঘালয়ের লিংদো জনজাতির বা-তাম্বোর-লিংদো কাজ শুরু করেছেন ডিফরেস্টেশনের উপরে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রকল্পের।
মেঘালয়ের মফলাং গ্রামের প্রধান বা-তাম্বোর-লিংদো (Bah-Tambor-Lyngdoh)। বহু দিন ধরে কাজ করছেন মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ে। এই এলাকার ও মেঘালয়ের আরও এলাকা মিলে মোট ২৭ হাজার হেক্টর জমি বাঁচানোর প্রকল্প শুরু করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আর সেই প্রকল্পেরই বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
খাসি পাহাড়ের পাদদেশে ও আশেপাশে লিংদো আর ব্লাহ জনজাতির বাস। বহু বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের পুরনো বিশ্বাস থেকে এই দুই জনজাতির মানুষজন বনাঞ্চল রক্ষার কাজ করে। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই সব এলাকারও বাণিজ্যিকীকরণ হয়। যার ফলে ধীরে ধীরে গাছ কাটা শুরু হয় এই সব এলাকায়। দ্য বেটার ইন্ডিয়া-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বা-তাম্বোর মফলাং জেলায় বনাঞ্চল বাঁচানোর কাজ শুরু করেন ২০০৭ সালে। তখন থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জের এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তাঁর মূল্য লক্ষ্য মানুষের হস্তক্ষেপে যেন বনাঞ্চল নষ্ট না হয়।
কী ভাবে এই কাজে যোগ দেওয়ার কথা ভাবলেন বা-লিংদো?
দ্য বেটার ইন্ডিয়া-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, যখন আস্তে আস্তে গাছ কাটা শুরু হয়, তখন তিনি দেখেন, তাঁর জনজাতি কতটা চিন্তিত ছিল বিষয়টি নিয়ে। কারণ আদি জনজাতি হিসেবে তাঁদের বনাঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড়। পাশাপাশি তিনি ভাবেন, যদি বন ধ্বংস হতে শুরু করে তা হলে এমন বহু পশু-পাখির প্রজাতি নষ্ট হয়ে যাবে, যারা হয় তো বিলুপ্তপ্রায়!
কিন্তু তিনি জানান, শুরুর দিকে মাফলাং এলাকার এই পরিস্থিতি নিয়ে কারও সে ভাবে মাথা-ব্যথা ছিল না। কোনও সংস্থার তাঁদের এই এলাকার কথা ভাবেনি। এই সব পরিস্থিতিই বা-লিংদোকে এই কাজে নিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্ররোচনা দেয়। এবং তিনি UN REDD+-এর অধীনে কা সিনজুক কি হিমা আরলিয়াং ওয়াহ উমিয়াম মফলং ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (Ka Synjuk Ki Hima Arliang Wah Umiam-Mawphlang Welfare Society) তৈরি করেন। এই সংগঠন বনাঞ্চল বাঁচাতে অর্থ সংগ্রহ করে এবং খাসি পাহাড়ের প্রায় ৬২ টি গ্রামের বনাঞ্চল রক্ষার্থে কাজ করে। শুধু এই নয়, যাঁরা বনাঞ্চল বাঁচানোর কাজ করে, তাঁদের আর্থিক সাহায্যও করে এই লিংদোর এই সংগঠন।
এর ফলে শুধু বনাঞ্চলই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে বাঁচছে সেখানকার জলাভূমি ও স্থলভূমিও।