#পঞ্জাব: ১৯৭১ সাল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জয় লাভ করে ভারত। এই সময় খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। সেই যুদ্ধে যে সৈনিকরা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরাও আজ ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়েই আছেন। কিন্তু এই যুদ্ধের সময় নিজের স্বামীকে হারিয়েছিলেন পঞ্জাবের জলন্ধরের সত্য দেবী। তাঁর স্বামীর নাম মঙ্গল সিং। যিনি এই ইন্দো-পাক যুদ্ধের সৈনিক ছিলেন। যুদ্ধ শেষ হয়। ভারতের জয় হয়, কিন্তু তাঁর স্বামী ফিরে আসেন না। সে সময় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে সৈনিকদের নিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। মাঝ নদীতে নৌকাডুবিতে তলিয়ে যান মঙ্গল সিং। তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু এ কথা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি সত্য দেবী। তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর স্বামী বেঁচে আছেন এবং একদিন ফিরে আসবেন। সেই আশাই সত্যি হল ৪৯ বছর পর। মঙ্গল সিং বেঁচে আছেন। তিনি পাকিস্তানের জেলে বন্দি রয়েছেন এতগুলো বছর ধরে। বিদেশ মন্ত্রালয়ের তরফ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে এই খবর।
তবে শুধু মাত্র সরকারের চেষ্টাতে এ খবর জানা যায়নি। মঙ্গল সিং যখন হারিয়ে যান, সে সময় সত্যর কোলে দুটি সন্তান। ছোট ছোট বাচ্চাদের মানুষ করতে হিমসিম খেতে হয়েছে তাঁকে। এবং এই গুলো বছর ধরে তিনি নিয়মিত চিঠি লিখেছেন সরকারকে। বলেছেন তাঁর স্বামীকে খুঁজে বার করতে। বহুবছর ধরে সরকারের দরজায় ঘুরছেন তিনি। অবশেষে তাঁর লড়াই স্বার্থক হল। তাঁর স্বামীর বেঁচে থাকার খবর এল। মঙ্গল সিংয়ের সে সময় বয়স ছিল ২৭ বছর। ভারত সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মঙ্গল সিংকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গেও কথা চলছে।
মঙ্গল সিংয়ের ছেলে জানান, "যে সময় বাবা হারিয়ে যান, আমার তখন মাত্র তিন বছর বয়স। বাবার স্মৃতি কিছুই নেই। তবে মা একদিনের জন্যও বাবার অভাব বুঝতে দেননি। এবং সব সময় বলতেন বাবা বেঁচে আছে। ফিরে আসবেন। আমিও বহু বছর ধরে সরকারের কাছে মায়ের সঙ্গেই বাবাকে খুঁজে বার করার আর্জি জানিয়ে আসছি। আজ সব কিছু সত্যি হল। এখন শুধু অপেক্ষা বাবার বাড়ি ফেরার।" এ গল্প যেন সিনেমার মতো। গোটা গ্রামে মঙ্গল সিং বেঁচে থাকার খবরে খুশির হাওয়া বইছে।