#কলকাতা: সময়টা ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ। লোকসভা ভোটের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তুলনা করে বসেন রাহুল গান্ধি। মহাগঠবন্ধনের সমর্থন নিতে তার দিন কয়েক আগেই সোনিয়া গান্ধির দূত হয়ে কলকাতায় আসেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে, মঞ্চ ভাগ করেন কুড়ি জনের বেশি বিরোধী দলের নেতা। অথচ সবটা ভুলে রাহুল গান্ধি মমতাকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তুলনা করতে আটকালেন না। মমতা কিন্তু রাহুলের কথায় সেদিন মমতা গুরুত্ব দেননি, বরং ভাঙনের ইঙ্গিত পাচ্ছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। প্রগলভ রাহুল এক পা এগিয়ে বলেছিলেন, আমায় ছোট ছেলে বলছে বলুন উনি। আমি কিছু বলব না।
তৃণমূল নেত্রীর আশঙ্কা সত্যি করেই সেদিন ধ্বস নেমেছিল কংগ্রেস ব্রিগেডে। এমনকি বাংলাতেও ১৮টি আসন পায় বিজেপি। ধাক্কা সামলাতে সেদিন দাবার চৌষট্টি খোপে সবথেকে বড় দানটি দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুদায়িত্ব দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন প্রশান্ত কিশোরকে। অতি নিন্দুকও স্বীকার করবেন, মাত্র দেড় বছরে তৃণমূলের খোলনলচে বদলে দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ এমনই, বিধানসভা ভোটে ঐতিহাসিক জয় তৃণমূল নেত্রীকে দিল্লির মসনদে দাবিদার করে তুলেছে। প্রশান্ত এবং তৃণমূলের গাঁটছড়াও আরও ৫ বছর বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, এমকে স্ট্যালিন, চন্দ্রবাবু নাইডু, শরদ পাওয়ার, ওমর আবদুল্লাদের সখ্য প্রমান করছে বিজেপি বিরোধী মঞ্চের তিনি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মুখ। এটা মেনে নিচ্ছে সব বিরোধীরাও। আর গোটাটাই যেন একটি পুতুল নাচের ইতিকথা। যে পুতুলখেলায় ওপর থেকে আঙুলে সুতো বেঁধে জাদুকরি করে চলেছেন প্রশান্ত কিশোর।
দিন কয়েক ধরেই প্রশান্ত কিশোর একটি একটি করে পা ফেলছেন রাজধানীতে। শরদ পাওয়ার এর সঙ্গে দেখা করেছেন, গান্ধি পরিবারের তিন সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন এসবই প্রশান্ত কিশোরের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের খেলা। পর্যবেক্ষকদের মত বিন্দুতে বিন্দু জুড়ে প্রশান্ত কিশোর একটি বৃত্ত রচনা করতে চাইছেন। একাংশের মত, আসলে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত।
আজই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিলেন তিনি শীঘ্রই দিল্লি যাবেন। এখান থেকেই পরিষ্কার, আগেভাগে দিল্লি গিয়ে আসলে নিখুঁত একটি ব্লুপ্রিন্ট সাজিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক কপিল ঠাকুরের কথায়, রাহুল গান্ধির দলকে সঙ্গে রাখতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রধান বিরোধী হিসেবে জায়গা ছেড়ে দেবে না। বিশেষত এত বড়, ঐতিহাসিক জয়ের পর দুঁদে রাজনীতিবিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডিভিডেন্ট বুঝে নিতে চাইবেন। এই গোটা ব্যাপারটাতেই হয়তো শেষ অবধি মধ্যস্থতায় থাকবেন প্রশান্ত কিশোর। নিয়তির মুচকি হাসি বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটা তিনিই।
-মূল প্রতিবেদক সুজিত নাথ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Mamata Banerjee, Prashant Kishor