#কলকাতা: দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। চোখে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের স্বপ্ন। আগামী তিনদিনের মধ্যেই তিনি দেখা করবেন সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। এই সাক্ষাৎ নিয়েই আপাতত চূড়ান্ত জল্পনা রাজধানীতে। জোটের গন্ধ এখন থেকেই পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এক সময়ে মমতাকে প্রায়ই বলতে শোনা যেত, রাজীব গান্ধি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন। শোনা যায় রাজীবই নাকি তাঁকে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উল্টোদিকে যাদবপুরে ভোটের লড়াই লড়তে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু কিউসেক জল। বহু ঝড়ের সাক্ষী মমতা এবার নির্বাচন-জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন । সেই জয়কে সামনে রেখেই আজ নতুন লড়াই শুরুর সময় তিনি আবার সেই গান্ধিদেরই কাছাকাছি। আর সেই বিন্যাসের দিকেই চেয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক মহল।
মমতা দিল্লি আসার আগেই অবশ্য দুই দল একে অপরের কাছাকাছি এসেছে। দিন কয়েক আগে তৃণমূল নেতারা পেগাসাস-বিদ্ধ রাজনীতিবিদদের নাম নিতে গিয়ে রাহুল গান্ধির নাম নিয়েছিলেন। আজ পাল্টা কংগ্রেসের তরফে পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে ট্যুইট করার সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করা হয়। ট্যুইটটিতে লেখা হয়, "নিজের শত্রুদের চোখে চোখে রাখতে হয় এই প্রবাদ ধরে কাজ করতে গিয়ে মোদি একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।"
ট্যুইট করছে কংগ্রেস। ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে অভিষেকের। শাসকের সাধারণ শত্রু হিসেবে দু'পক্ষকেই চিহ্নিত করাও হচ্ছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক মহল বলছে, এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের উদ্দেশ্যে কংগ্রেসের সুস্পষ্ট বার্তা।
অনেকের আবার বিষয়টাকে ড্যামেজ কন্ট্রোল হিসেবে দেখছেন। কারণ অতীতে বিশেষত অধীর চৌধুরীর সৌজন্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সুসম্পর্কের ছেদই ঘটেছে। সোনিয়ার নিজে কখনও মমতার সঙ্গে সম্পর্কে কোনও মালিন্য আনেননি। কিন্তু অধীরের কটাক্ষ তৃণমূল ও কংগ্রেসকে বারংবার দূরেই সরিয়ে দিয়েছে। মমতার এই সফরকে তাই দ্বিপাক্ষিক ভাবেই কাছে টানার রাজনীতি হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগেও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব বিরোধীদের একজোট করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়নি। কারণ কংগ্রেসই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এবার মমতা এসেছেন রেকর্ডের ঝুলি সঙ্গে নিয়ে। আগেভাগেই ওয়ার্ম আপ শুরু করে দিতে চাইছেন মমতা। সেই কারণে সব বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। আবার স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি। নির্বাচনের পর এটাই তার প্রথম মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ। মনে করা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়েই কথা বলতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজনীতিপ্রেমীরা অবশ্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সমীকরণ কোন জায়গায় যায়, তা বুঝতে।
মমতার দূত হিসেবে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পেগাসাস কান্ডে তাঁর নাম জড়ানোয় জাতীয় রাজনীতিতে তার গুরুত্ব বেড়েছে বই কমেনি। আগামী দিনে মমতা কি আরও বেশি দিল্লি অভিমুখী হবেন, অভিষেক কি রাজ্যে আরও বেশি করে দায়িত্ব নেবেন, এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে মমতার এই ছোট দিল্লি সফরের পরে।
এই মুহূর্তে শুধু এটুকু বলা যেতে পারে মমতার ভঙ্গিটা- বিনাযুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী নাহি দিব। যদিও প্রশ্ন থেকে যায়, একটি আঞ্চলিক দলের নেতৃত্ব কি কংগ্রেস মেনে নেবে। কিন্তু ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সেই বক্তৃতা যে পিচিদাম্বারাম এবং দিগ্বিজায় সিংহরা দিল্লিতে বসে শুনেছেন তা অস্বীকার করা যায় না।
এই পরিস্থিতে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সেতুবন্ধনে এই পরিস্থিতিতে সবথেকে বেশি জল্পনা একটি নাম নিয়েই। তিনি আর কেউ নন, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর।
-Pallavi Ghosh
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Mamata Banerjee, Sonia Gandhi