#গুজরাত: গুজরাতের পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচনে একের পর এক জয় ছিনিয়ে নিচ্ছে BJP। বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে এ যেন বাড়তি অক্সিজেন। এক কথায় বলতে গেলে, গুজরাতের পৌরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। কিন্তু কী শিক্ষা দিল এই নির্বাচনের ফলাফল? আসুন জেনে নেওয়া যাক!
এক্ষেত্রে গুজরাতের মোট ৩১টি জেলা পঞ্চায়েত, ৮১টি পুরসভা এবং ২৩১টি তালুকায় পঞ্চায়েতের নির্বাচন হয়েছিল। ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে সেই রাজ্যে জেলা পঞ্চায়েতগুলির সবক'টিতেই জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। জেলা পঞ্চায়েতে ৭৮৬ আসন জিতেছে BJP। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে মাত্র ১৬৭টি আসন। শুধু পঞ্চায়েতেই নয়, গুজরাতের পৌরভোটেও বিপুল সাফল্য পদ্ম শিবিরের। গুজরাতের ৭৪টি পৌরসভায় জয় পেয়েছে BJP। মাত্র একটি পৌরসভা দখল করেছে কংগ্রেস। ৬টি পৌরসভার ফল ত্রিশঙ্কু। তালুকা পঞ্চায়েতেও ২৩১টির মধ্যে ১৯৬টিতে জয় পেয়েছেন BJP প্রার্থীরা। তাহলে কোথায় খামতি থেকে গেল? বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে কংগ্রেস যেন দুর্বল রণকৌশলের জন্যই মুখ থুবড়ে পড়ল!
২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি সিট জিতেছিল কংগ্রেস। এর মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও কংগ্রেসের একটা জায়গা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত স্তরেও কংগ্রেসের ভিত মজবুত নয়। আর এই জনরায়ের মাধ্যমে একাধিক বার্তা দিল গুজরাতের মানুষ। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) পাশে দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে গুজরাতের মানুষ। যে বিশ্বাস ক্রমবর্ধমান। দ্বিতীয়ত, মোদির বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রচার চালিয়ে জেতা অসম্ভব। এক্ষেত্রে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে জয়ের মাধ্যমে অনেকটা জায়গা পেয়েছিল কংগ্রেস। ডেভেলপমেন্ট মডেলের পাশাপাশি একটি বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলার অবকাশও ছিল। তবে কোথাও যেন সেই লক্ষ্যে এগোতে পারল না দল। যা থেকে বাকি বিরোধী দলগুলিকে শিক্ষা নিতে হবে। আসলে একদম তৃণমূল স্তরে সমস্যাগুলির উপরে গুরুত্ব না দিয়ে কোথাও যেন মোদির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কংগ্রেস। আর এখানেও রণকৌশল তৈরি করেছেন স্থানীয় BJP নেতৃত্ব। যা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিয়েছে।
গ্রাউন্ড লেভেল পলিটিক্স যে কী করতে পারে, তা আরও একবার দেখিয়ে দিল BJP। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে প্রচার চালিয়েছেন, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে বিরোধীদের। এক্ষেত্রে কৃষক আন্দোলনের প্রতি গুজরাতের দৃষ্টিভঙ্গিও স্পষ্ট হয়ে গেল। কৃষক আইনের বিরুদ্ধে প্রচার করেও বিরোধীরা তেমন কোনও ফায়দা তুলতে পারল না।
সত্যি কথা বলতে, প্রায় সাত-আট বছর ধরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে রয়েছেন মোদি। গুজরাত থেকে দূরে থেকেও তিনি যে রাজনৈতিক আদর্শ তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন, তারই লাভের ফসল তুলছে গুজরাতের BJP নেতৃত্ব। আর এর কৃতিত্ব কোথাও না কোথাও নরেন্দ্র মোদির। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উদাহরণ টানা যেতে পারে। তামিলনাড়ু থেকে কামরাজ (Kamraj) যাওয়ার পর এক অর্থে ধস নামে কংগ্রেসে। একই উদাহরণ দেখা যায় অন্ধ্রপ্রদেশে YSR ও মহারাষ্ট্রে বিলাসরাও দেশমুখের ( Vilasrao Deshmukh) ক্ষেত্রেও। তবে নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের জন্য এক আলাদা রাজনৈতিক মাটি তৈরি করে দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই তার অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল স্টেট প্রেসিডেন্ট পদে সি আর পাটিলকে বসানো। আর আজ প্রতিটি জয় BJP যেন আরও এগিয়ে দিচ্ছে।
তাই গুজরাতের নির্বাচন থেকে বেশ কিছু শিক্ষা পাওয়া গেল। যা আমাদের রাজনৈতিক দর্শনকে কোথাও না কোথাও অনেকটা প্রভাবিত করবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলি আরও সচেতন হবে।