#কলকাতা: মৃত্যুকে স্মরণ করেই লিখেছিলেন মৃত্যু আয় তিনপাত্তি খেলি আয়। সেই মৃত্যুই আজ তাঁকে ডেকে নিয়েছে। কিন্তু ৮৬ বছর বয়সে যখন কর্মময় জীবনটা শেষ হতে চলেছে, বাঙালির কণ্ঠে একটাই স্বর- যেতে নাহি দিব। কেও়াতলা শ্মশানে তাঁর মরদেহ যখন শেষযাত্রায় যাচ্ছে, কোভিড উপেক্ষা করে ভেঙে পড়ছে রাজপথ। রাজপথে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ, ঘুচে গেছে রাজনীতির সব রঙ।
অনেকেই মনে করতে পারছেন না, মরদেহ ঘিরে এত বড় ভিড় শেষ কবে দেখা গিয়েছিল। হুইল চেয়ার নিয়ে প্রিয়জনকে দেখতে এসেছেন প্রৌঢ়া, প্রিয় ফেলুদাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় দেখা মিলবে ছোট্ট শিশুরও। শীতের সন্ধ্যার ভারী বাতাস আরও ভারী হয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্রগানে, রাজনীতির দৈনিক কোন্দল ভুলে সকলে যখন গাইছেন-আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুণ্য করো।
এ দিন সৌমিত্রের দেহ প্রথমে গলফ গ্রিনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে তাঁর দেহ আসে রবীন্দ্রসদনে। শিল্পীকে মালা দেন বহু পরিচিত অপরিচিত মানুষ। তখন কোথায় দূরত্ব, কোথায় রাজনীতি! আজ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় থেকে দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায় কাঁদছিলে আর বলছিলেন একই কথা, সবটা হাত ধরে শিখিয়েছিলেন, পিতৃপ্রতীম ছিলেন। অপর্ণা সেন তাঁকে পলিম্যাথের মর্যাদা দিচ্ছিলেন, এমন মানুষ যিনি সারাক্ষণ কাজের পাশাপাশি লিখছেন, আঁকছেন, রাজনৈতিক ভাবে সরব হচ্ছেন। আইকনের শেষযাত্রায় শামিল হতে দেখা গেল সূর্যকান্ত মিশ্রকেও।
অসুখের দিনগুলিতে নীরবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ এই শেষযাত্রাতেও গোটা পথটা হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ-উত্তমকুমারের মৃত্যুর দিনের কথা বাঙালির স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল। তেমনই একটা স্মৃতিকাতরতার দিন হিসেবে থেকে যাবে এই দিনটাও। বেলাশেষে সৌমিত্র চললেন, কিন্তু এ যাওয়া নিছক যাওয়া নয়, সময়ের বালুকাবেলায় তাঁর ছায়া কী দীর্ঘ!