# নয়াদিল্লি : করোনাভাইরাস (Coronavirus) শব্দটা শুনলেই মানসিক চাপ, অবসাদ, পরিবারের মানুষের থেকে দূরে থাকা, লকডাউন, আইসোলেশন এই সব কথা মাথায় আসে। সঙ্গে রয়েছে প্যানিকও। যাঁদের করোনা হয়েছে, হাসপাতালে থাকতে হয়েছে আলাদা করে বা মৃত্যুর ভয় নিয়ে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার পরিস্থিতি হয়েছে, তাঁদের স্ট্রেস ফ্রি রাখতে শুরু থেকেই মিউজিক থেরাপি অ্যাপ্লাই করেছেন অনেক চিকিৎসকই। কিন্তু ভয়, মানসিক অবসাদ বা স্ট্রেস শুধুই কি রোগীদের বা তার পরিবারেরই হয়? না, এই পরিস্থিতিতে একই নৌকায় পা দিয়ে চলছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তাই এ বার তাঁদের কথা মাথায় রেখে প্রোজেক্ট মুভ নামের একটি অনলাইন লাইব্রেরি চালু করেছেন কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। যেখানে কাজের ফাঁকে রিফ্রেশড হতে বা স্ট্রেস রিলিজ করতে একটু কোমর দুলিয়ে বা গান শুনে আনন্দ করে নেওয়া যেতে পারে।
লকডাউনের মাঝে, যখন করোনা নিয়ে আতঙ্ক রীতিমতো বশ করেছে আমাদের, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা বা পরিবারের লোকজনের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে, তখন হঠাৎই বাদশা-র (Badshah) হায় গরমি গানে এক চিকিৎসকের নাচের ভিডিও ভাইরাল হয়। পিপিই পরে, মাস্ক, গ্লাভস পরে অসহ্য গরমে ডিউটি করছিলেন তিনি, তার পরই তাঁর মাথায় এই গানে নাচ করার কথা আসে। তিনি নেচেও ফেলেন। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গরমে পিপিই পরে তাঁদের প্রত্যেকের অবস্থা এমনই হয়, কিন্তু সেই স্ট্রেস থেকে বের হতে নাচ, গান করে আনন্দে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। এমন ছবি দেখা গিয়েছে, ইতালির বেশ কিছু হাসপাতালেও। আর সেখানে মিউজিক বা নিজের মতো একটু নাচ বা গানের সঙ্গে গলা মেলানো অনেকটাই রিফ্রেশড করে দেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরাও।
করোনা পরিস্থিতিতে এক মেডিকেল পড়ুয়া আনায়না পটেল বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, কী ভাবে এই মিউজিক অন মুভ বিষয়টি কাজ করে। অর্থাৎ মিউজিক শুধু রোগীদেরই নয়, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য়কর্মীদের ক্ষেত্রেও কতটা প্রভাব ফেলে, সেটা দেখার জন্য নিজেকে দিয়েই সেই পরীক্ষা শুরু করেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আনায়না জানান, মেডিকেল কেরিয়ারের মানুষজনের লাইফে অনেক বেশি স্ট্রেস থাকে। পড়ার চাপ, পরীক্ষার চাপ, পাশাপাশি কোভিড (Covid 19) পরিস্থিতিতে কাজের চাপ। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে গিয়ে কাজের চাপ। সব মিলিয়ে অত্যন্ত মানসিক চাপ তৈরি হয়। নিজের এই অভিজ্ঞতা থেকেই পরে তাঁর মাথায় আসে এই মিউজিক অন মুভের কথা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, আনায়না প্রথমে ভাবেন যে ব্রেকের সময়ে কিছু ব্যালে মুভমেন্ট অভ্যাস করবেন তিনি। তবে, তাঁর শরীরে ফিটনেসের অভাবের জন্য হঠাৎ করে ব্যালে মুভমেন্ট করা সম্ভব হয় না। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়। যা জন্ম দেয় প্রোজেক্ট মুভ নামের একটি অনলাইন লাইব্রেরির। সেখানে প্রচুর নাচের ভিডিও ও গান রয়েছে। যাতে যখন ইচ্ছে, সেখান থেকে নিজেদের রিফ্রেশড করতে পারেন স্বাস্থ্য কর্মীরা বা চিকিৎসকরা।
প্রোজেক্ট মুভ লাইব্রেরিটি পুরোপুরি ফ্রি। যাঁরা কাজ করে করে একদম বিরক্ত হয়ে যাবেন, কাজ করার ইচ্ছে থাকবে না, তাঁরা অনায়াসেই এই লাইব্রেরি খুলে পছন্দ মতো গান বা নাচ বেছে নিতে পারেন। ওবেবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা বৈদেহী পটেল। তিনি একজন ব্যালে ডান্সার। তাঁকে এই কাজ করার জন্য আনায়নাই অনুপ্রেরিত করেন। প্রস্তাবও দেন। বৈদেহি জানান, তিনি করোনা পরিস্থিতিতে প্রচুর হাসপাতালে কাজ করেছেন, সেই সময়ে দেখেছেন যে, সবাইকে কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তার পরই তিনি তাঁদের সম্মান জানাতে, কৃতজ্ঞতা জানাতে এই কাজ করার কথা ভাবেন।
বৈদেহী আরও জানান, এই লাইব্রেরিতে যে ধরনের নাচ বা মুভমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই মেডিটেশনের জন্য। পাশাপাশি যোগ-সহ অন্যান্য অনেক কিছুই দেওয়া রয়েছে।