#নয়াদিল্লি: করোনার জেরে একাধিক ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। যার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য তো রয়েছেই। রয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাও। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসবের মধ্যে ভারতে শিক্ষা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা ফিরিয়ে আনতে বিরাট চ্য়ালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে দেশকে।
করোনার জেরে মার্চের শুরু থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার ফলে প্রাথমিক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। এপ্রিলের শুরু থেকে দু'টি মাধ্যম, একটি অনলাইন ও অন্যটি কমিউনিটি টিভি বা টেলিভিশনে সম্প্রচারের মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু হলেও তা অনেকের কাছেই পৌঁছায় না। কারণ মোবাইল কেনার ক্ষমতা না থাকা, ইন্টারনেট কানেকশন নেওয়ার ক্ষমতা না থাকা, প্রত্যন্ত গ্রামে নেটওয়ার্কের সমস্যা ও বাড়িতে টিভি না থাকা।
এর ফলে পড়াশোনার দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে সমাজের একটা অংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে পড়াশোনাতেও যে খুব একটা লাভ হয়েছে তা নয়, কারণ অনলাইনে মনোযোগ দেওয়া বা এই নতুন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতে পড়ুয়াদের সময় লেগেছে। অনেকেই বাড়ির পরিবেশে অনলাইনে পড়তে পারেনি। পাশাপাশি ফিজিক্যাল প্রেজেন্সের যে প্রয়োজন হয়, তা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় পড়ার গতি অনেকটা কমে গিয়েছে।
এক দিকে যেমন স্ট্রাগল করেছেন পড়ুয়ারা, অন্য দিকে স্ট্রাগল করেছেন শিক্ষক-অধ্যাপকরাও। তাও যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।
শিক্ষায় এক্ষেত্রে দু'ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি ২০২০ থেকে ২১ পর্যন্ত পড়ুয়ারা কী কী শিখেছে বা আদৌ কিছু শিখেছে কি না! আর স্কুল মার্চ, ২০২০-তে বন্ধ হওয়ার পূর্বে তারা যা জানত, তা মনে আছে কি না!
এবার প্রথম ধরনের ক্ষতিটা খুব স্বাভাবিক। কারণ কোনও বাচ্চার কাছে যদি মোবাইল না থাকে, স্মার্টফোন না থাকে বা ইন্টারনেট না থাকে, তা হলে সে এই ২০২০-২১-এ কিছুই পড়েনি। আর আগে যা শিখেছে অভ্যাস নষ্ট হওয়ায় তাও ভুলতে বসেছে। এই দ্বিতীয় ক্ষতিকেই অ্যাকাডেমিক রিগ্রেশন বলে আখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁদের কথায়, কোনও একজন পড়ুয়া যে ক্লাস ফোরে পড়ে, গোটা বছর কোনও পড়াশোনা করতে পারল না, সে স্কুল বন্ধের আগে অর্থাৎ ক্লাস থ্রিতে যেটা শিখেছে, সেটা ভুলে যেতে বসেছে। এক ফলে এক অ্যাকাডেমিক বছরে ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। আগেরটাতেও এর প্রভাব পড়ছে।
এই বিষয়টি সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে বিষয়টি নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। যাতে ৪৪টি জেলার ১৬,০৬৭ জন বাচ্চাকে প্রশ্ন করা হয়। এতে প্রায় ২০০০ মানুষের সাহায্য নেওয়া হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮২ শতাংশেরও বেশি বাচ্চা অঙ্কের খুঁটিনাটি ভুলে গিয়েছে এবং ৯২ শতাংশেরও বেশি বাচ্চা ভাষা ও সাহিত্যের খুটিনাটি ভুলে গিয়েছে।
এবার এখান থেকে কাউকে আবার নতুন করে পুরোটা শেখানো, যেমন অঙ্কের ক্ষেত্রে কাউকে আবার যোগ, ভাগ, গুন বা সূত্র শেখানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে যারা বুঝবে না, তারা কিন্তু পিছিয়ে পড়বে। তাই এই সমস্যা সমাধানে অনেকটা বেশি সময় ও ধৈর্য লাগবে। শিক্ষকদের পড়ুয়াদের প্রতি যত্নবান ও ধৈর্যশীল হতে হবে। পাশাপাশি তাদের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে আবার আগের জীবনে ফেরার অর্থাৎ পড়াশোনায় ফেরার সময় দিতে হবে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়!