#চেন্নাই: তামিলনাড়ুতে নির্বাচনী যুদ্ধের আগে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিশ্রুতি এবং পাল্টা প্রতিশ্রুতির ঢল। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে অভিনেতা-রাজনীতিবিদ কমল হাসান (Kamal Haasan) যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন 'গৃহবধূদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান', সেই ধারণাটিই এবার আসন্ন নির্বাচনের আগে দাবানলের মতো ছড়ালো। এআইডিএমকে (AIADMK) এবং ডিএমকে (DMK), দুই দলই সম্প্রতি তাদের ইস্তেহারে একই রকম ঘোষণা করেছে। অন্য দিকে, কমল হাসানের দল মাক্কাল নিডহি মাইয়াম (MNK) তামিলনাড়ুতে এপ্রিলের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গৃহকর্মীদের তিন হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো পোল-সীমাবদ্ধ রাজ্যেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরিবারের প্রধানদের বা গৃহকর্মীদের জন্য একই রকম আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সামাজিক প্রকল্পগুলি তামিলনাড়ু গত কয়েক দশক ধরে চলছে। মনে করা হয় এসসি/এসটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে সাইকেল প্রদান প্রকল্পটি ২০০১-০২ সালে এই সব রাজ্যগুলিতে চালু হয়েছিল। এটি পরবর্তীকালে সরকারি এবং সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষার্থীর জন্য বাড়ানো হয়েছিল।
কমল হাসান অবশ্য জোর দিয়েছিলেন যে গৃহবধূদের জন্য অর্থপ্রদানের প্রকল্প কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য নয়, বরং তাঁদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হবে। যদিও পরবর্তীতে এটি নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হয়। কারণ অনেকের মতে এটি কেবল পুরুষদের গৃহস্থালি কাজ থেকে দূরে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এর সঙ্গে লিঙ্গভেদ প্রথাও জড়িয়ে রয়েছে বলে সরব হন অনেকে।
তামিলনাড়ুতেও বেশিরভাগ দলই মহিলাদের নিছক ভোটব্যাংক হিসাবে দেখার জন্য দায়ী। বাস্তবে এই সব প্রকল্প অধরাই থেকে যায়। ১৯৮৯ সালে, ডিএমকে নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে, তামিলনাড়ুতে মহিলাদের সমান সম্পত্তির অধিকার প্রদানের জন্য একটি আইন করা হয়েছিল। অনেক বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই প্রকল্প সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় বেশ কিছু মহিলা এই সুযোগ-সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবেন। এছাড়া তামিলনাড়ু স্থানীয় সংস্থাগুলিতে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয় এবং ২০১৯ সালে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এআইএডিএমকে সরকার ২০১৯ সালে চাকুরিজীবী মহিলাদের স্কুটার কেনার ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার একটি পরিকল্পনা চালু করে। এছাড়া ক্রেডল বেবি স্কিম, বিবাহ সহায়তা প্রকল্পের মতো আরও কয়েকটি প্রকল্প চালু করা হয়।
তবে তামিলনাড়ুতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, গৃহবধূদের মাসিক ভাতা প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা কি শুধুই নির্বাচনী যুদ্ধজয়ের সুকৌশল না কি মহিলাদের পরিবর্তনের একটি সূচনা সেটাই দেখার! উত্তরটা না হয় সময়ের জন্য তোলা রইল!