বেঁচে থাকার জন্য একেবারে ন্যূনতম চাহিদা মেটার পরে বাড়তি যা কিছু ঘটে, তা-ই আসলে সভ্যতা৷ পঙ্গপালের জীবনও অনেকটা নির্ভর করে মানব সভ্যতার উপরেই৷ যার বড় ভিত্তি হল কৃষি ক্ষেত্র৷ আসলে কৃষিজমিতেই পঙ্গপালরা এই সময়টায় খাবার ও প্রজনন ঘটায়৷ এই মুহর্তে দেশের ৫টি রাজ্য পঙ্গপালের হানায় বিপর্যস্ত৷ রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে৷ পঙ্গপালদের একটি গোষ্ঠীতে প্রায় ৮০ লক্ষ থাকে৷ এরা একসঙ্গেই থাকে, খায় ও প্রজননও করে৷
মরুভূমির এই পঙ্গপালরা নিজেদের শরীরের ওজনের সমান প্রতিদিন খায়৷ পঙ্গপালের একটি দল একদিনে আড়াই হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে৷ আপাতত তারা হানা দিয়েছে রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে৷ মাত্র তিনটি প্রজনন সময়ে এদের সংখ্যা লাফিয়ে ১৬ হাজার বেড়ে যায়৷ আর্দ্রতা যুক্ত সবুজেই এরা প্রজনন ঘটায়৷ তাই পঙ্গপালদের লক্ষ্য থাকে সবুজ ফসল জমিতেই৷ মাঠ ভর্তি সবুজ ফসল খেয়ে শেষ করে ফেলতে এদের বেশি সময় লাগে না৷
পঙ্গপালেরা কী ভাবে ভারতে আসে?
মরুভূমির পঙ্গপালরা সাধারণত সৌদি আরবে মরূভূমিতেই বাস করে৷ মৌসুমি বায়ু চলাচল শুরু হলে এরা ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়৷ রাজস্থান ও গুজরাতে নিয়ম করে প্রতি বছর আসে৷ ভারতে বছরে ১০ বার পঙ্গপাল হানা ঘটেই৷
তবে ২০১৮ সাল থেকে পরিস্থিতি একটু বদলেছে৷ ২০১৮ সালে সৌদি আরবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল৷ দুটি সাইক্লোন হয়েছিল৷ মে ও অক্টোবরে৷ মরুভূমিতে দুটি ছোট হ্রদেরও জন্ম হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরব সাগরে সম্প্রতি বছরে ৩টি করে সাইক্লোন তৈরি হচ্ছে৷ আগে যেখানে ৫ বছরে একটি হত৷
সাইক্লোনের ফলে পঙ্গপালদের গতিবিধিতে দু ভাবে প্রভাব পড়ে৷ প্রথমত, নিজেদের জায়গাতেই খাদ্য ও প্রজননের অনুকূল পরিস্থিতি পেয়ে যায়৷ দ্বিতীয়ত, সাইক্লোনের জেরে হাওয়ার গতিবিধি সাময়িক ভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়৷ তখন তারা মরুভূমি ছেড়ে ইয়েমেনের দিকে যেতে শুরু করে৷ তারপর আফ্রিকায় ঢোকে৷ সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি করে৷ বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে৷
ভারতের পথে
উত্তরের দিকে যাত্রা করা পঙ্গপালগুলি লোহিত সাগর পেরিয়ে ইরান ও পাকিস্তান ঢোকে৷ লোহিত সাগরের উপকূলে বৃষ্টিপাত এদের সাহায্য করে৷ ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তানের ৪০ শতাংশ শস্য নষ্ট করে দিয়েছিল পঙ্গপাল৷ এরপর পাড়ি দেয় ভারত৷ পশ্চিম রাজস্থানে বর্ষা নির্দিষ্ট সময়ের ৬ সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছিল৷ বর্ষার জেরে বৃষ্টিপাত৷ আর সবুজ ফসল৷ পঙ্গপালদের পোয়া বারো৷ সাধারাণত জুলাইয়ে পঙ্গপালরা ভারতে আসে৷ তারপর অক্টোবরে ফের পাকিস্তান ও ইরানের উদ্দেশে রওনা দেয়৷
তাড়াতাড়ি বর্ষা নামলে পঙ্গপালরাও তাড়াতাড়ি আসে৷ গতবছর নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্থানে ছিল পঙ্গপালরা৷
এ বছর আবার কেন?
আসলে এ বছর জানুয়ারিতে ইরান-পাক সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়৷ মরুভূমি থেকে পঙ্গপালরাও আসতে থাকে৷ তার ফলে গরমের শুরুতেই তারা ভারতেও চলে এসেছে৷ হাওয়া অফিসও বলেছে, অন্যবারের চেয়ে এবছর ১ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত ভারত ২৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি পেয়েছে৷ রাজস্থানেও তাপপ্রবাহ খুব একটা তৈরি হয়নি৷