#নয়াদিল্লি: স্মার্টফোনের যুগে হাতের মুঠোয় দুনিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আঙুলের ছোঁয়ায় পৌঁছে যাওয়া যায় চেনা-পরিচিতের কাছে। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকলে স্মার্টফোন-সোশ্যাল মিডিয়া সবই যে অকেজো। যেন জীবনটাই থমকে। হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে অশান্তির জেরে, অসমের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেরও বেশ কিছু জেলায় এখন বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা ৷ ধীরে ধীরে বেশ কিছু জায়গায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সর্বত্র তা এখনও নয় ৷ যার জেরে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ইন্টারনেটের অভাবে থমকে অনেক সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাজও। কিন্তু মজার বিষয় হল, CAA নিয়ে অশান্তি রুখতে ভারতের এই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখাকে উদাহরণ হিসেবেই দেখানো হয়েছে চিনের সেন্ট্রাল কমিটি অফ কমিউনিস্ট পার্টির সরকারি সংবাদপত্রে ৷ কাগজে লেখা হয়, "সম্প্রতি ভারত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এর মানে জরুরী অবস্থায় ইন্টারনেট বন্ধ করা সার্বভৌম দেশগুলির অনুশীলন হওয়া উচিৎ।’’
সাম্প্রতিক সময়ে, সবচেয়ে বেশিবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধে নজির গড়েছে ভারত । পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর থেকেও বেশি ইন্টারনেট পরিষেবা বিঘ্ন ঘটেছে ভারতে। এর মাঝে, অসম সরকারকে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার নির্দেশ দেয় গুয়াহাটি আদালত ৷ প্রায় ৯ দিন পর অসমে ফের চালু হয় ইন্টারনেট পরিষেবা ৷ গুয়াহাটি হাইকোর্টের মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু করার নির্দেশ না চিন সরকারের ভাল লাগবে না ভারতের। কিন্তু ভারতে এটি একটি যুগান্তকারী রায়।
গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশের পর শুক্রবার, ৯ দিন পর অসমে চালু হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। রাজ্যকে হাইকোর্ট এটাও বলে যে,' বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতিতে, মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাগুলি এখন দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া মানে মানুষের জীবন স্তব্ধ করে দেওয়া।
এদিন রায় দেওয়ার সময় আইনজীবি গৌতম ভাটিয়া বলেন, "হাইকোর্ট এটাও মেনে নিয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আপনি কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে পারেন ৷ যাতে প্রতিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু রায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - প্রথমত, ইন্টারনেট কীভাবে প্রতিবাদের নামে তান্ডব ছড়ায় তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য। দ্বিতীয়, ইন্টারনেটের জন্য নির্দিষ্ট কোনও হিংসার ঘটনাও সামনে আসে নি। সুতরাং, সরকার ব্যর্থ হয়েছে প্রমাণ করতে গুজব আটকাতেই এমন সিদ্ধান্ত।
গত সেপ্টেম্বরে, কেরল হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায়ে জানিয়েছিল, ইন্টারনেট ব্যবহার সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার। কেরলের একটি কলেজের হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীদের প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিষেধ ছিল। সবাই এটা মেনে নিলেও একটি মেয়ে সেই নিয়ম মানেন নি। তাঁকে কলেজ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। পরে কলেজের অধ্যক্ষকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, সেই মেয়েটিকে আবার কলেজে ফিরিয়ে আনতে। হাইকোর্ট জানিয়েছিল,'‘ বর্তমানে বিশ্বে ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকারকে ষষ্ঠ মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেউ শিক্ষার্থীদের এই অধিকারকে কেড়ে নিলে, আইন সেটা মেনে নেবে না।' ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়লে যে ইন্টারনেট শাটডাউন হতে পারে সে কথাও মেনে নিয়েছে গুয়াহাটি হাইকোর্ট।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Anti caa potest, Assam Protest, Citizenship Amendment Act, Gauhati High Court, Internet Shutdown