#নয়াদিল্লি: অক্টোবর ২৬, ১৯৬২৷ ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রক থেকে একটি চিঠি পৌঁছে দিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির কাছে৷ ভারতের সীমান্ত বরাবর চীন যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার ঠিক ছ’দিন আগে৷ নেহরু আমেরিকার কাছে সামরিক সাহায্য চাইলেন৷ দ্রুত উত্তর দিলেন কেনেডি৷ ঐতিহাসিক শ্রীনাথ রাঘবন লিখছেন, ‘ভারত অনুরোধ জানানোর চারদিনের মধ্যে একটি মার্কিন যুদ্ধবিমান হাল্কা অস্ত্র নিয়ে হাজির হল কলকাতা বিনামবন্দরে৷’ তারপর বেশ কয়েকদিন ধরে কেনেডি ভারতে পৌঁছে দিলেন প্রায় ৪০ হাজার টন যুদ্ধাস্ত্র যা চীন যুদ্ধের সময় নতুন করে সামরিক শক্তিকে বলিয়ান করে তুলতে সাহায্য করেছিল৷তারপরেও প্রায় চারদশক অপেক্ষা করতে হয়েছিল৷ চারদশক পর আমেরিকা বিশ্বাস করেছিল এক শক্তিশালী ভারতের ধারণায়, যে ভারত নিজের শক্তিতে বলীয়ান৷ ওদিকে, ভারতের রণনীতি নির্ধারণকারীরাও একটা দীর্ঘ সময় নিয়েছিলেন৷ ফলে ভারত মার্কিন সম্পর্ক নির্মাণে অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল৷মোটামুটি ২০০০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার এক শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক তৈরি হয়৷ হয়ত, সামরিক অবস্থান থেকে রাশিয়াকে কিছুটা চাপে রাখার তাগিদেই আমেরিকা এই রণনীতি নিয়েছিল৷ ভারতকে একের পর এক চুক্তিতে আমেরিকা বিক্রি করেছিল নজরদারি চালানোর নৌবহর, এছাড়া চীনা ডুবোজাহাজের হাত থেকে রক্ষা পেতেও একাধিক অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠিয়েছিল আমেরিকা৷ দেওয়া হয়েছিল হেলিকপ্টার, নৌ সেনার বন্দুক, আরও অনেক কিছু৷আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘ভারত এখন কোনও জোটে না থেকেও আমেরিকার ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সমান গুরুত্ব পায়৷’ নানারকম রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঝামেলা থাকার পরেও ভারত ও আমেরিকার এই সামরিক বাণিজ্যের সম্পর্ক কিন্তু দিনের পর দিন উন্নততর হয়েই চলেছে৷সাধারণত আমেরিকা দু’টি ভিন্ন পথে অস্ত্র বাণিজ্য করে থাকে৷ প্রথমটি হল ‘ফরেন মিলিটারি সেলস (এফএমএস)৷ যার মাধ্যমে আমেরিকার অস্ত্র প্রস্তুতকারীর বা সরবরাহকারীর থেকে মার্কিন প্রশাসন সরাসরি অস্ত্র কিনে নেয়৷ তারপর তার দাম পাল্টে অন্য দেশগুলির কাছে বিক্রি করে৷ ভারতের ক্ষেত্রে সেই দামের বদলের পরিমাণ ৩.৮ শতাংশ৷
একাধিক আলোচনায় দেখা গিয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে এই এফএমএস পদ্ধতি খুবই কাজের৷ যদিও সরকার থেকে সরকারের মধ্যে এই কেনাবেচা হওয়ায় প্রশাসনের কাঁধেই এর সব দায়িত্ব বর্তায়, যা ঝামেলার৷২০০৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকা ভারতকে ৯.২ ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ২০১১ সালে সেই বাণিজ্যের অঙ্ক সবচেয়ে বেশি বেড়ে হয়েছিল ৪.৫ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এফএমএস রুটটি ভারতকে ‘এমএইচ৬০আর সিহক হলেকিপ্টার’ ‘অ্যাপাচে হেলিকপ্টার’ ‘পি৮১ মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফ্ট’ এবং ‘এম৭৭৭ হাউৎজার’ বিক্রি করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল৷ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কারণে চীন যুদ্ধ পরবর্তীকালে ভারত ও আমেরিকার তেমন করে সম্পর্ক গড়ে উঠছিল না৷ ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময়েও রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক কারণেই পাকিস্তানকে হাতে রাখতে হয়েছিল আমেরিকার৷ তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হয়নি৷ স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্যে ছেদ পড়েছিল৷ কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পরেই চিত্রটা পাল্টায়৷ সম্পর্কের আরও উন্নতি হয় অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে৷ একদিকে রাশিয়া, অন্যদিকে আমেরিকার সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক তৈরি হয় ভারতের৷ ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সামরিক চুক্তির অঙ্কটা পৌঁছে যায় প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন ডলারে৷তবে ভবিষ্যতে ভারত আমেরিকার সামরিক বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন থাকবে তা নির্ভর করবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর৷ তার মধ্যে রয়েছে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আমেরিকা কীভাবে তাঁর প্রযুক্তিকে আড়াল করবে, সেই বিষয়টি৷Abhijnan Rej
Published by:Uddalak Bhattacharya
First published:
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।