আসানসোল : ক্যান্সার বা কর্কট রোগের নাম শুনলে জীবন যেন জল হয়ে যায়। মানুষের জীবনে এই রোগের থাবা নেমে আসে যমদূত হয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের সমস্ত রকম প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে প্রাণ ত্যাগ করেন আক্রান্ত রোগীরা। এই রোগে আক্রান্ত হলে নানাবিধ কষ্ট সহ্য করতে হয় রোগীদের।
চিকিৎসা শাস্ত্রে একাধিক উন্নতি হলেও, এখনও পর্যন্ত কর্কট রোগ পুরোপুরি ভাবে নির্মূল করার উপায় চিকিৎসকদের হাতে আসেনি। অন্যদিকে এখনও পর্যন্ত বহু ধরনের ক্যান্সার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে কোলন ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্ব জুড়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন- কাজের টোপ দিয়ে মহিলাকে হোটেলে ডাকে যুবক, তার পর ঘটল জঘন্য ঘটনা
সেই কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার আশার আলো দেখাচ্ছে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। কোলন ক্যান্সার জীবাণুরোধী ভ্যাকসিনের ডিজাইন প্রস্তুত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সারের জন্য ফুসো ব্যাকটেরিয়াম নিউক্লেটাম নামের ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করেন। এই ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ে কাজ করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন একটি ভ্যাকসিনের ডিজাইন প্রস্তুত করেছেন, যা ব্যাকটেরিয়া দমনে কার্যকরী ভূমিকা নেবে। এই ব্যাকটেরিয়া দমন করা গেলে, রোধ করা যাবে কোলন ক্যান্সারের প্রকোপ।
অন্যদিকে বিভিন্ন রকম সার্ভের মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, শহর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা। স্বাভাবিকভাবেই এই ভ্যাকসিনের ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হলে, অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পাবে - এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন- ফুটবল জাগলিং! সংসারের হাল ফেরাতে মন্দিরার লড়াই জানলে চোখে জল আসবে
ইতিমধ্যেই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভ্যাকসিনের ডিজাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমেরিকান সোসাইটি পর ভাইরোলজি। তাছাড়াও এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের ইটেগ্রেটিভ বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড ইমিউনোলজি ল্যাবরেটরীতে হয়েছে গবেষণাটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল সায়েন্সের গবেষক সুপ্রভাত মুখার্জি এবং তার দুই গবেষক পড়ুয়া সোমরিতা পদ্ম এবং ঋত্বিক পাত্র এই গবেষণায় কাজ করেছেন।
তাছাড়া ওড়িশ্যার বেরহামপুরের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চ - এর সরোজকুমার পদ্ম, মলয়কুমার রানা কাজ করেছেন। সহযোগী হিসেবে ছিলেন ডিওয়াই পাতিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি'র পার্থসারথি সেনগুপ্ত।
এই বিষয়ে গবেষক সুপ্রভাত মুখার্জি জানিয়েছেন, কোলন ক্যান্সারের জন্য দায়ী যে ভাইরাস সেই ভাইরাস নিয়ে কাজ করার আগে তারা একটি সার্ভে চালিয়েছেন। তখন তারা দেখেন খনি অঞ্চলের বহু মানুষের মধ্যে রোধে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।
অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণীসহ অনেকের মধ্যেই রয়েছে প্রাতরাশ না করার অভ্যাস। সেখানেই কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে ফুসো ব্যাকটেরিয়াম নিউক্লেটাম। আর এই ব্যাকটেরিয়ার জন্য বাড়ছে কোলন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরপর গবেষকরা এই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। তারা দেখ বুঝতে পারেন, কোনওভাবে এই ব্যাকটেরিয়ার সক্রিয়তা দমন করা গেলে ক্যান্সারের প্রকোপ কমানো যাবে।
ব্যাকটেরিয়া দমন করতে তখনই ভ্যাকসিনের ডিজাইন প্রস্তুতির কাজ শুরু করেন তারা। কিন্তু কিভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিনটি? গবেষকরা জানিয়েছেন, কোলন ক্যান্সার রোধে যে ভ্যাকসিনের ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ফাইব্রোব্লাস্ট অ্যাক্টিভেশন প্রোটিন সিকুয়েন্স থেকে ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। যা হিউম্যান টোল লাইক রিসেপটরকে সক্রিয় করে। পরবর্তীতে তা ইমিউনসেলকে সক্রিয় করবে। পাশাপাশি অ্যান্টিবডিও তৈরি করতে সক্ষম হবে।
গবেষকরা বলছেন, এই ডিজাইন থেকে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা গেলে কোলন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবেন মানুষজন।
Nayan Ghosh
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Cancer