#নয়াদিল্লি: আর দু'দিন পরই ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেট। বর্তমানে সেদিকেই তাকিয়ে ব্যবসায়ী থেকে অর্থনীতিবিদ সকলে। ইতিমধ্যেই বাজেট নিয়ে দু'-এক কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman)। তিনি জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেট এমন ভাবে সাজানো হচ্ছে, যা আগে কখনও দেখেনি ভারতবাসী। বাজেট ঘোষণার আগে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ- স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো উচিৎ সরকারের। বর্তমানে GDP-র ০.৯৫ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। তা বাড়াতে হবে আগামীদিনে এবং ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২.৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।
গতবছর বাজেট ঘোষণার পর থেকেই করোনার জেরে ধীরে ধীরে পরিবর্তন এসেছিল সব কিছুতে। যার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় প্রভাবই পড়েছে দেশের অর্থনীতির উপরে। কিন্তু ধীরে ধীকে লকডাউন তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ চাকরিজীবীকে ফিরিয়ে আনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ শুরু করায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। চলতি মাসে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো দিকে এগোতে শুরু করেছে। RBI বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া পরামর্শ দিচ্ছে, রাজকোষ ঘাটতি পূরণে কেন্দ্র, রাজ্যকে মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (Centre for Monitoring Indian Economy)-র তথ্য বলছে চাকরিজীবীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ পুরুষ ইতিমধ্যেই কর্মক্ষেত্রে ফিরেছেন, কিন্তু মহিলারা এক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে রয়েছেন।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যেহেতু কোনও রকম বেতন কাটা যায়নি প্যানডেমিকে, তাই এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বেড়েছে ও এই কেরিয়ারে আসার প্রবণতাও অনেকটা বেড়েছে, বিশেষ করে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিতে। যা GDP-তে প্রভাব ফেলছে। হাসপাতালের প্রত্যেকটি বেড ৫ জনের চাকরি তৈরি করে প্রত্যক্ষ ভাবে আর পরোক্ষভাবে ২৫ জনের। তবে, বিনিয়োগকারীরা যেখানে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে, দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে একটু পিছিয়েই যাচ্ছে। তার কারণ মূল অর্থ বা ক্যাপিটাল বিনিয়োগের পরিবর্তে রিটার্ন বা লাভের পরিমাণ এই ক্ষেত্রে অনেকটাই কম। তাই তেল, গ্যাস বা FMCG দ্রব্যে বিনিয়োগে ইচ্ছে প্রকাশ করলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সে ভাবে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।যার ফলস্বরূপ, এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী জোগাড় করা সরকারের পক্ষে চ্যালেঞ্জের হয়ে যাচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে এই ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে হবে সরকারকে। তবেই বিনিয়োগকারী টানা যাবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে কাউকে কোনও চিকিৎসার সরঞ্জাম কিনতে GST দিতে হয় না। কিন্তু যারা এই পরিষেবা দিচ্ছে, তাদের কিন্তু সেই দ্রব্য ক্রয় করার সময় GST দিতে হচ্ছে। ফলে সেই টাকা তাদের পকেট থেকে যাচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখানে বিরাট একটা অঙ্ক কিন্তু আটকে থাকছে এবং এটা থেকে লাভ হচ্ছে না। ফলে মূল বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে লাভের পরিমাণ কমছে। তাই এই জায়গাটিও সরকারের দেখা উচিৎ।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নয়ন, উন্নত পরিকাঠামোর কথা বলতে গিয়ে সরকার অনেক সময়েই বিশ্বের প্রথম সারির রাষ্ট্রের সঙ্গে এর তুলনা করে থাকে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে তাদের বরাদ্দের সঙ্গে করে না। প্রথম সারির অনেক রাষ্ট্রই জিরো রেটিং পদ্ধতি চালু করেছে যাতে এই ক্ষেত্রে কোনও কর লাগে না। কিন্তু এটাই যদি আমাদের দেশ করতে যায়, তা হলে অন্তত GDP-র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে দিতে হবে। তা না হলে হবে না। এবং স্বাস্থ্য বিমার উপরেও জোর দিতে হবে।
দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত স্বাস্থ্যক্ষেত্র। তাই এই ক্ষেত্রটির উন্নয়ন দরকার। আগে স্বাভাবিক সময়ে স্বাভাবিক অর্থ বরাদ্দ করলেই কাজ হয়ে গেলেও বর্তমানে প্যানডেমিকের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন।
কী কী পলিসি এক্ষেত্রে নেওয়া যেতে পারে-
সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য জমি সরবরাহ করতে হবে
বিশেষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য জোন ভাগ করে দেওয়া
জীবন-নির্বাহী যন্ত্রপাতি থেকে ইমপোর্ট ডিউটি তুলে নেওয়া
স্বাস্থ্য বিমার পরিকাঠামো উন্নত করা
হাসপাতালগুলির বিদ্যুৎ বিলে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া
তবে, করোনা পরিস্থিতির পর সমাজের একটা অংশ স্বাস্থ্য বিমা করার দিকে ঝুঁকেছে। তবে, সরকারের উচিৎ যাদের আয় ভালো, তাদের জন্য আকর্ষণীয় স্বাস্থ্য বিমা তৈরি করা যাতে তারা আগ্রহ হয় বিমা করাতে।
(প্রতিবেদনটি লিখেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর)