#শ্রীনগর: পুলওয়ামার ভয়াবহ জঙ্গিহানায় যেন থমকে দেশ। ঘটনার আকস্মিকতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি লেথাপোরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি সেখানেই সিআরপিএফের কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা হয়। কয়েক দিন কাটলেও এখনও থমথমে এলাকা। আতঙ্কের ছবি স্পষ্ট। শহিদের পাশাপাশি জঙ্গি হানার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় আরও একটি মৃতদেহ ৷ সেটি হল আদিলের ৷ এই হামলায় আদিল মানব বোমার ভূমিকায় ছিলেন ৷ আত্মঘাতী হামলায় তারও মৃত্যু হয় ৷ পুলওয়ামার বিস্ফোরণে আদিল আহমেদ দার একটি লাল রঙের এসইউভি চালিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছেন ওই হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা ।
আদিল জইশ-এ-মহম্মদ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৷ জইশ এমন একটি সংগঠন যা ধর্ম ও স্বাধীনতার নামে আতঙ্ক ছড়ায় ৷ সকলেই জঙ্গি আদিলের ব্যাপারে জানে ৷ কিন্তু এই আদিলের সঙ্গে নিজের ভাইয়ের কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছেন না ফারুখ অহমেদ ৷ তার কথায় বারবার ফিরে আসছে সেই সময়ের ছবি যখন তার ভাই আদিল হতে চেয়েছিল ডাক্তার ৷ সেই সময়ের আদিল ছিল সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষ বলে জানালেন ফারুখ ৷ স্কুল থেকে এসে পড়তে বসা, বাড়ির কাজে মায়ের সাহায্য করা বা প্রতিদিন বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া আদিল ছিল তার ভাই ৷ আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার আদিল যেন অন্য কোনও মানুষ ৷
সম্প্রতি ১৭ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকারে আদিল সম্বন্ধে বেশ অনেক কিছুই জানালেন তার ভাই ফারুখ ৷ তার মতে যে পরিবেশে আদিল ও অন্য কাশ্মীরি যুবকরা বড় হয়ে উঠেছে সেটাও বেশ অনেকটায় দায় তার আজকের এই পরিণতির জন্য ৷ ফারুখ জানিয়েছেন, এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলেই যুবকদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দেওয়া হত ৷ আদিলের সঙ্গেও এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে ৷ এরকমই একদিন তাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় স্কুল থেকে ফেরার পথে ৷ বাড়ি ফিরে নিজেকে ঘরে আটকে নেয় আদিল ৷ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে অন্য এক দুনিয়ায় সেদিন হারিয়ে গিয়েছিল আদিল ৷
এই আদিলের মধ্যে ছিল শুধু রাগ ও ক্রোধ ৷ তখন থেকেই কাশ্মীরিদের উপর হওয়া নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদী কথা বলত ৷ এই বিষয়ে আগে কখনও আদিলকে কখনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে ফারুখ ৷
মার্চ ২০১৮ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল আদিল ৷ সেই দিনই পরিবারের সঙ্গে তার শেষ দেখা ৷ পরীক্ষার পর আর বাড়ি ফেরেনি আদিল ৷
এরপর আদিলের নতুন পরিচয় হয় বকস কমান্ডো ৷ হাতে ছিল AK 47 ৷ বেশ অনেকদিন পর তার খোঁজ পাওয়া গেলেও আদিলকে হারিয়ে ফেলেছিল তার পরিবার ৷ এর পর থেকে তাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই আদিলের খোঁজে তল্লাশি চলত ৷ পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হত ৷
পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী, আদিল 'C' শ্রেণির জঙ্গি ছিল ৷ ততদিনে এটা স্পষ্ট যে আদিল আর কোনও দিন ফিরবে না ৷ আদিল যে এরকম একটি পদক্ষেপ নিয়ে ফেলবে তা পরিবারের কেউ হয়ত কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবেনি ৷ ফারুখ জানান যে ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর এটাই মনে হয় এই আদিলের সঙ্গে তাদের কোনও দিন দেখায় হয়নি ৷
ফারুখ জানান যে তারা তাদের পরিবারের ছেলেকে হারিয়েছে ৷ তাই জওয়ানদের পরিবারের জন্যেও সমবেদনা জানালেন তিনি ৷ কারণ তারা মৃতদের পরিবারের দুঃখ বুঝতে পারেন ৷ পাশাপাশি এদিন ফারুখ আরও জানান যে তাদের যা হারানোর তারা তা হারিয়েছে ৷ কিন্তু কাশ্মীর আর মৃত্যু বা হিংসা চায় না ৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Jammu And Kashmir, Pulwama attack, Pulwama Terror Attack