#নয়াদিল্লি: ১৯৯২ সালের ৬ অগাস্ট ৷ একদল করসেবক আচমকা হামলা চালাল বাবরি মসজিদে৷ তাদের দাবি ছিল, ওই স্থানে ছিল রামমন্দির৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক হিংসা ৷ হাজার হাজার মানুষ সেই হিংসার বলি হন৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসীমা রাও ফের তৈরির ঘোষণা করেন ও এই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্রের তদন্তের জন্য বিচারপতি এমএস লিবরহনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন৷
ওই কমিটি ১৭ বছর পরে রিপোর্ট পেশ করে৷ কিন্তু এই মামলার নিষ্পত্তি করতে এতটাই সময় নিচ্ছিল যে সুপ্রিম কোর্টে এর মাঝে ওই জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের রায়ও দিয়ে দেয়৷ ১৯৯২ সালে যেদিন মসজিদ ভাঙা হল, সেদিনই দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়৷ একটি এফআইআর করা হয় একাধিক করসেবকের বিরুদ্ধে৷ অন্য এফআইআর-টি দায়ের করা হয় বিজেপি, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দলের ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে৷ এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, রামকথা পার্কের মঞ্চ থেকে বাবরি মসজিদ ভাঙার উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার৷ এই এফআইআর-এ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশি, উমা ভারতী, বিশ্বহিন্দু পরিষদের তত্কালীন মহাসচিব অশোক সিঙ্ঘল, বজরং দলের নেতা বিনয় কাটিয়ার, সাধ্বী ঋতম্বরা, গিরিরাজ কিশোর-সহ একাধিক ব্যক্তিত্বের নাম ছিল৷
প্রথম এফআইআর-এর তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়া হয়৷ অপর এফআইআর-টির তদন্তভার দেওয়া হয় উত্তরপ্রদেশ সিআইডি-কে৷ ১৯৯৩ সালে দুটি এফআইআর-ই অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করা হয়৷ ১৯৭ জন করসেবকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানির জন্য ললিতপুরে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়৷ অপর এফআইআর-এর শুনানি ট্রান্সফার করা হয় রায়বেরেলির বিশেষ আদালতে ৷ তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসীমা রাওয়ের সরকার একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে রামলালার সুরক্ষার জন্য ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে৷ ১৯৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি ওই অধ্যাদেশ সংসদে পাশ হয় এবং তা আইনে পরিণত করা হয়৷
লিবরহন কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু নানা ভাবে তা বাড়তে বাড়তে ১৭ বছর কেটে যায়৷ ৪৮ বার সময়সীমা বাড়ানো হয়৷ ২০০৯ সালের ৩০ জুন লিবরহন কমিটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে রিপোর্ট দেয়৷ গোটা প্রক্রিয়ায় ৮ কোটি টাকা খরচ হয়৷ রিপোর্ট বলা হয়, বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য একটি গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল৷
১৯৭ নম্বর এফআইআরে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক হাজার করসেবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। লখনউয়ের আদালতে শুরু হয় মামলা। ১৯৮ নম্বর এফআইআরে আডবাণী, জোশী, উমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হয়। রায়বরেলির আদালতে শুরু হয় মামলা। তদন্ত শুরুর পর তিরানব্বইয়ের অক্টোবরে ২ মামলায় যৌথ চার্জশিট দেয় সিবিআই। ৪৮জন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও মসজিদ ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। ২০০১-এ আডবাণী-সহ ১৪ জন নেতাকে, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় নিম্ন আদালত।
২০০৩-এ সিবিআই আর একটি চার্জশিট দিলেও, রায়বরেলির আদালতের নির্দেশে প্রমাণ না থাকায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছাড়াই আডবাণীদের বিরুদ্ধে এগোতে থাকে মামলা। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল রেখে, আডবাণীদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। ২০১১ সালে করা সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়। আডবাণী-সহ ১৪ জন নেতার বিরুদ্ধে ফিরে আসে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ।
২০১৭ সালের ৩০ মে লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে আডবাণী, জোশী, উমা-সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। কারণ, মোট ৪৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৭ জনের ততদিনে মৃত্যু হয়েছে। এরপর ২০১৯-এর ২০ জুলাই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র মামলায় আগামী নয় মাসের মধ্যে রায় দেওয়ার জন্য সিবিআই আদালতকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সিবিআই কোর্ট জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়, মামলার নিষ্পত্তির জন্য আরও ৩ মাস সময় দিক শীর্ষ আদালাত৷ সিবিআই কোর্টের বিশেষ অযোধ্যা বিচারকের অনুরোধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রহিনটন এফ নরিমানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ডেডলাইন আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেয়৷
২০১৭ সালের এপ্রিলে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে 'ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার পাতাকে নাড়িয়ে দিয়েছে' আখ্যা দেয় আদালত৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।