নয়াদিল্লি: অগ্নিপথ-এ অগ্নিগর্ভ দেশ— একাধিক রাজ্যে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ‘অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্প’ অনুমোদন করেছে। আসলে এ হল এমন প্রকল্প যাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ হবে অস্থায়ী ভিত্তিতে। এই নীতি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পরই বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানা-সহ সারা দেশের অধিকাংশ রাজ্যে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ। সূত্রের খবর, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চারটি খালি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। আটটির বেশি ট্রেন ভাঙচুর করেছেন এবং বিভিন্ন রেলপথ অবরোধ করেছেন।
গত তিন দিনে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরাল হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় অনেকেই বলছেন, এ-ই কী বিক্ষোভের চেহারা? অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যাঁরা আগামী দিনে দেশের সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চলেছেন, যাঁরা সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি করার দাবি করছেন তাঁরা নিজেরাই দেশের অভ্যন্তরীন শান্তি ও সম্পত্তির নষ্ট করে ফেলছেন, কী ভাবে?
বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে হয়তো বোঝা যেতে পারে, এই মুহূর্তে দেশের পরিস্থিতি ঠিক কেমন! যে কোনও দেশেই এ ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায়, কালে কালে এমন ইতিহাসের সাক্ষী পৃথিবী। অনেক সময়ই দেখা যায় দেশে কোনও নতুন নীতি নির্ধারিত হলে, তা ইতিবাচক হোক বা না হোক, আম জনতার কাছে তা গ্রহণীয় বলে মনে হয় না। শুরু হয় বিক্ষোভ। অনেক সময় তা হিংসাত্মক চেহারা নিতে পারে। এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেনা নিয়োগ প্রকল্প ঘিরে, তা এক প্রকার নজিরবিহীন—তা বলাই যায়।
দেশের ভিতরেই এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যাঁরা এই বিক্ষোভ দেখিয়ে অশান্তি তৈরি করছেন, তাঁরা কি আদৌ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদান দিতে চান! একাংশ নাগরিকের দাবি, যাঁরা দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার তৈরি করে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করছেন তাঁরা দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাবেন কী ভাবে? যদিও অনেকেই মনে করছেন সরকারি নতুন নীতি আসলে ক্ষতি করবে দেশের। সহায় হারাবেন প্রাণবাজি রেখে সীমান্ত রক্ষা করা জওয়ানেরা, সিপাইরা। সরকার পক্ষ যদিও আশ্বস্ত করেছে 'অগ্নিপথ স্কিম' ভারতীয় যুবকদের উপকৃত করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের (UK) মতো উন্নত দেশগুলির প্রতিরক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই নতুন নীতি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পের খুঁটিনাটি—
নতুন প্রকল্পটি কোথায় আগের নীতি থেকে আলাদা?
এর আগে, কেন্দ্রীয় সরকার নন-কমিশনড র্যাঙ্ক পোস্টগুলি পূরণ করতে প্রতি বছর শূন্যপদ প্রকাশ করত। তার ফলে তৎকালীন প্রার্থীরা ১৫ থেকে ২৪ বছরের মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে, প্রার্থীদের শুধুমাত্র ৪ বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া, এর আগে সশস্ত্র বাহিনীতে ১৫ বছর চাকরির মেয়াদ পূরণ করলেই সৈনিকরা সরকারি পেনশন পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠতেন। নতুন নিয়মে সেই সুযোগ থাকবেই না। এক কথায় পেনশন প্রায় উঠেই যাবে।
অগ্নিপথ প্রকল্পের উপকারিতা কোথায়?
১. দেশ সেবা করার সুযোগ অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পের অধীনে, একজন প্রার্থীর বয়সের ঊর্ধ্ব সীমা হবে 26। এটি আরও বেশি সংখ্যক যুবকদের দেশ রক্ষার সুযোগ দেবে এবং তরুণ সৈন্যদের নিয়ে একটি বাহিনী তৈরি করবে, অর্থাৎ আজ থেকে ৫০ বছর পর, যখন দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বার্ধক্যের দিকে পৌঁছবে, তখনও দেশের সেনাবাহিনী তরুণ থাকবে।
আরও পড়ুন- অগ্নিপথের জেরে বাতিল একাধিক ট্রেন! কোন কোন ট্রেনের যাত্রা রদ করা হল, রইল তালিকা
২. নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ২৫ শতাংশ কাজে বহাল
নতুন নিয়মে চার বছরের জন্য এই নিয়োগ দেওয়া হবে ঠিকই। কিন্তু সরকার নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৫ শতাংশ সৈনিককে কাজে বহাল রাখবে। অর্থাৎ তাঁরা সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ চালিয়ে যাবেন। অন্যদের জন্যও ভাবনাচিন্তা করা হবে। রাজ্য পুলিশের মতো পৃথক নিয়োগ কার্যক্রমে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- ভয়াবহ চিত্র: স্কুল বাসে আটক শিশুদের আতঙ্ক! অগ্নিপথ বিক্ষোভের জেরে উত্তাল দেশ!৩. অভিজ্ঞতা এবং সঞ্চয়
কঠোর প্রশিক্ষণ এবং শৃঙ্খলার অধীনে, যে আধিকারিকেরা ২৬ বছর বয়সে অবসর নেবেন তাঁরা আর্থিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই তাদের সাধারণ সমকক্ষদের চেয়ে শক্তিশালী হবেন বলে দাবি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের দাবি, তাঁদের তাৎক্ষণিক আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে চার বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা আধিকারিকদের পরিষেবা তহবিল প্যাকেজ হিসাবে সরকার ১১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা দেবে। তা ছাড়া দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’ শংসাপত্র। এই বিশেষ শংসাপত্রধারী সৈনিকরা রাজ্য সরকারের পুলিশের পুলিশ ও সহযোগী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে অগ্রাধিকার পাবেন।
২০১৩ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ভারতে ২ শতাংশেরও কম যুবক ২৫ বছর বয়সের মধ্যে ১২ লক্ষ টাকা জমাতে পারেন৷ সেই রিপোর্টকে উল্লেখ করেই বলা হচ্ছে অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘অগ্নিবীর’রা মাত্র ২৫ বছর বয়সেই আর্থিক ভাবে সক্ষম এবং কৌশলগত ভাবে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Agnipath