কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্ণা কর্মসূচি শুরুর দিনেই পাল্টা ধর্ণায় বসবে বিজেপি। আজ বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ শে মার্চ, বুধবার, শ্যামবাজারে ধর্ণায় বসবেন সুকান্ত, শুভেন্দুরা।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হতে কলকাতার রেড রোডে আম্বেদকর এর মূর্তির নিচে ২৯শে মার্চ থেকে দু - দিনের ধর্ণায় বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঐ দিনেই শহীদ মিনার ময়দানে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভার ঘোষনা হয়েছিল আগেই। বিজেপি আজ সেই দিনেই তাদের পাল্টা ধর্ণার কথা ঘোষনা করেছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা খরচে গরমিলের হিসাব ও 'চোর'দের ধরার দাবিতে ১ দিনের ধর্ণায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে তৃণমূলের এই জোড়া প্রচারের পালের হাওয়া কাড়তেই বিজেপির এই কৌশল।
আরও পড়ুন - IMD Weather Update|| সাগরে ঘনাচ্ছে বিপদ! বাতাস বইবে ঘণ্টায় ৬৫ কিমি গতিতে, কলকাতায় কবে তুলকালাম
ওড়িশা সফরে যাওয়ার আগে কলকাতায় ফিরে দু'দিনের ধর্ণায় বসার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যকে বকেয়া টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া দরকার। কলকাতায় দু'দিনের ধর্ণার পর এই বার্তা গ্রামের ব্লক স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তৃণমূলের এই ঘোষনা দেখে বাম, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা বলেছিল, রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে ব্যার্থতা আর শাসক দলের সীমাহীন দূর্নীতি ঢাকতেই, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ কে হাতিয়ার করতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আজ বিজেপি যে ধর্ণার ঘোষণা করেছে সেই কর্মসূচির বিষয়ও সেই কেন্দ্রীয় প্রকল্প। বিজেপির ধর্নার মূল লক্ষ্য তৃণমূলের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগকে নস্যাৎ করে শাসক দলের দূর্নীতিকে প্রচারে আনা।
আরও পড়ুন - Fish Price News|| মাছ ছাড়া বাঙালির আর কী আছে, গঙ্গার মাছের দামে বড় ঘটনা ঘটছে, চমকে যাবেন
যদিও, মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণার পাশে বিজেপির পাল্টা কর্মসুচিকে কোন গুরুত্বই দিতে চায়নি তৃণমূল। তৃণমূল মুখপাত্র কূণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, ওরা ফেসবুক, টুইটারে আছে। মানুষের সঙ্গে নেই। ওদের ধর্ণা নিয়ে মানুষের কোন আগ্রহ নেই। অন্যদিকে, বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, বিজেপি অন্য কোন দলের কর্মসূচি দেখে তার কর্মসূচি ঘোষনা করে না। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারন সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "গত ১০ বছরে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ মোট ৫ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছে। তার মধ্যে ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি খরচের কোন হিসাব দিতে পারে নি রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করার আগে এই টাকার হিসাব দিন মুখ্যমন্ত্রী। চোরেদের ধরুন। "
বিরোধীদের মতে, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের ওপর চাপ তত বাড়ছে। শিক্ষা, আবাস, ১০০ দিনের কাজ এর মত গ্রামীন প্রকল্পে শাসক দলের দূর্নীতি প্রতিদিন যেভাবে সামনে আসছে, তাতে আশঙ্কিত হয়ে দৃষ্টি ঘোরাতে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার মত পুরনো অস্ত্রতেই আবার শান দিতে চাইছেন মমতা। কিন্তু, বহু ব্যবহারে এই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে। সেটা বুঝতে পারছেন না তৃণমূল। লোকসভার আগে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী জাল কেটে দলকে আবার লড়াইয়ের ময়দানে ফেরাতে তৃণমূলের ভরসা সেই মমতাই। তাই কলকাতার রাজপথে ২ দিনের ধর্ণায় বসছেন মমতা।
এদিকে, ২৯ শে মার্চ, মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণার পাশাপাশি,শহীদ মিনারে তৃণমূল ছাত্র - যুবদের সমাবেশে ভাষন দেওয়ার কথা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের। শহীদ মিনারের এই সমাবেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই জট পাকিয়েছে। শহীদ মিনারে রাজ্য সরকারের বকেয়া ডিএ র দাবিতে আন্দোলনকারিদের ওই দিন তাদের অবস্থান কর্মসূচি বন্ধ রাখার আর্জি জানানো হয়। কিন্তু, যৌথ মঞ্চের তরফে তৃণমূলের সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। সেনার তরফেও এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে সেখানে সভা করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, শহীদ মিনারে অভিষেকের সভা নিয়ে জট কাটে নি। সেনার অনুমতি না দেওয়ার পেছনে বিজেপির প্রত্যক্ষ মদত রয়ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। আবার, আজ শ্যামবাজারে পাল্টা ধর্ণার ঘোষনা করতে গিয়ে ধর্ণায় পুলিশের অনুমতি মেলা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজেপি। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ''ওই দিন বিজেপির ধর্ণা হবে। পুলিশ অনুমতি না দিলে আমরা আদালতে যাব।"
পর্যবেক্ষদের মতে, রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির দূর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকেই প্রধান ইস্যু করতে চাইছে তৃণমূল।
ARUP DUTTA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।