#উত্তরাখণ্ড: তপোবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাইরের টানেলে প্রায় তিন দিন হয়ে গেল দাঁড়িয়ে রয়েছে 'ব্ল্যাকি'। ড্রিলিং মেশিন চালিয়ে ক্রমাগত চলছে ধ্বংসস্তূপ সরানো ও উদ্ধারকাজ। সেখানেই ঠায় অপেক্ষায় 'ব্ল্যাকি'। কে এই 'ব্ল্যাকি'? চারপেয়ে বন্ধু ব্ল্যাকি আসলে স্থানীয় একটি রাস্তার কুকুর। তবে তাকে ভালোবাসায় ও যত্নে আপন করে নিতে পেরেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই ব্যক্তির অপেক্ষাতেই টানেলের বাইরে এখনও অপেক্ষা করে চলেছে কুকুরটি। হয়তো সে মনে মনে ভাবছে, এই বুঝি বন্ধু এসে তাকে খাবার দেবে, আগলে নেবে কোলে।
গত রবিবার হিমবাহ ভেঙে ভয়াবহ তুষারধস নামে উত্তরাখণ্ডের চমোলি জেলায়। সকালে জোশীমঠের কাছে ওই তুষারধসের জেরে ধউলিগঙ্গার জলস্তর প্রবল ভাবে বেড়ে যায়। তীব্র জলোচ্ছ্বাসে একের পর এক গ্রাম ভেসে যায়। ভেঙে যায় সেতু। রাত পর্যন্ত ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ছিলেন ১৫০ জন শ্রমিক। তাঁরা প্রত্যেকেই তপোবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছিলেন। প্রশাসনের আশঙ্কা এঁদের কেউই হয়তো বেঁচে নেই।
মনে করা হচ্ছে ব্ল্যাকির বন্ধু-মালিকও হয়তো এই তপোবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেই কাজ করতেন। তবে এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি। কোনওমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরা রাজেন্দ্র কুমার নামে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, 'আমরা ওকে খাবার দিচ্ছি, ঘুমনোর জন্য একটি ব্যাগও দেওয়া হয়েছে তাকে। আমরা সকাল থেকে এখানে উদ্ধারের কাজ করি। ব্ল্যাকিও এখানে বসে থাকে। সন্ধেয় কাজ শেষ হয়ে গেলে ও ফিরে যায়। তবে সকাল হতেই ফের চলে আসে।'
জানা গিয়েছে, এনটিপিসির তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিতর প্রায় ৩৪ জন শ্রমিক আটকে ছিলেন। পাঁচদিনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জন। রবিবার থেকে এখনও ১৬৮ জন মানুষের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হওয়ার সময়ই ব্ল্যাকির জন্ম এই এলাকায়। প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে সেও বেড়ে উঠেছে। তুষারধসের সময় ব্ল্যাকি এখানে ছিল না। তার আগের রাতে সম্ভবত পাহাড়ের নিচে নেমেছিল খাবারের খোঁজে। পরদিন ফেরার পর জায়গাটাই যেন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে।
কয়েকদিন হল কালো পাহাড়ি কুকুর ব্ল্যাকিও বুঝতে পারছে যে, চারিদিকে অপরিচিত লোকের ভিড়। কেউ খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না তাকে। চেনা মুখগুলো একজনও নেই। সে কারণেই সে ঠায় ওই টানেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে প্রিয়জনের। উদ্ধারকারী দল কুকুরটিকে সেখান থেকে চলে যেতে বললেও সে যায়নি। ভারী মেশিনের যাতে কোনও আঘাত না লাগে সে কারণে টানেলের নিচেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে চলেছে সে। উদ্ধারকারী দলের আশা, 'হয়তো খুব শীঘ্রই ব্ল্যাকি তার প্রিয়জনকে দেখতে পাবে। কিন্তু সেটাই শেষ দেখা কিনা তা জানা নেই।'