#উদয়পুর: বলা হয় বটে আধুনিক যুগ, আধুনিক সভ্যতা! কিন্তু সে ভাবে দেখলে বিয়ে নামের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তথাকথিত ভারতীয় সমাজে এখনও জড়িয়ে রয়েছে নানা রকমের অনাধুনিক এবং অনুচিত ব্যাপার-স্যাপার। যার অনেকটাই একটা বড়সড় অঙ্কের টাকার সঙ্গে যুক্ত। এই টাকা খরচের ব্যাপারটা মূলত আসে পণপ্রথার দিক থেকে। নগদ টাকা, গাড়ি, আসবাব, অলঙ্কার- যত ভাবে পারা যায় এক পক্ষ অন্য পক্ষকে খরচ করাতে বাধ্য করে! এর উপরে আবার রয়েছে বিয়ে করার আনুষ্ঠানিক খরচও। কাগজের বিয়ে অর্থাৎ ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অনেক বছর হয়ে গেল আমাদের দেশে আইনত সিদ্ধ। কিন্তু শুধু সেটুকুতেই আটকে থাকে না বিয়ের জৌলুস। জাঁকজমক করে সাবেকি ভারতীয় প্রথা অনুসারে বিয়ে না করলে, সর্বোপরি, লোক না খাওয়ালে আজও দেশের অনেক জায়গায় বিয়ে বৈধ বলে স্বীকার করা হয় না!
বিয়ে সংক্রান্ত এই যাবতীয় কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিগত ১৮ বছর ধরে সোচ্চার রাজস্থানের উদয়পুরের নারায়ণ সেবা সংস্থান। আর্থিক খরচের কারণে যাঁদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সেই সব পরিবার তো বটেই, পাশাপাশি বিশেষ ভাবে সক্ষম সমাজের সদস্যদেরও বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে থাকে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতি বছর এই সংগঠনের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়ে থাকে গণবিবাহের অনুষ্ঠান। চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। একদিকে যেমন শীত পড়তে না পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিয়ের মরসুম, তেমনই চলতি বছরের জন্য নির্বাচিত পাত্রপাত্রীদের নিয়ে গণবিবাহের মণ্ডপ সাজিয়ে তুলল নারায়ণ সেবা সংস্থান। তাদের উদ্যোগে ১১টি বিশেষ ভাবে সক্ষম দম্পতি পবিত্র অগ্নি এবং দেশীয় আইনকে সাক্ষী রেখে বাঁধা পড়লেন শুভ বিবাহের সাত পাকে।
এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন উদয়পুরের কমলেশ। ছোটবেলা থেকেই তিনি পোলিও রোগে আক্রান্ত। পরে একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর পায়ের সমস্যা কিছুটা হলেও ঠিক হয়েছে, আপাতত ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে পারেন তিনি। প্রথমে মুদির দোকান দিয়ে শুরু করে আপাতত পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে উপার্জন করেন কমলেশ। কিন্তু আর্থিক কারণে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্যে তাঁর বিয়ের সাধ পূর্ণ হচ্ছিল না। নারায়ণ সেবা সংস্থানের উদ্যোগে এই গণবিবাহে তিনি পূজার সঙ্গে দাম্পত্যজীবন শুরু করলেন।
কমলেশের মতো পূজারও রয়েছে হাঁটাচলার সমস্যা। দুর্ঘটনায় একটি পা হারানোর পরে তিনি দাম্পত্যজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন। কিন্তু নারায়ণ সেবা সংস্থানের উদ্যোগে কমলেশকে পেয়ে তাঁর আর খুশি আর ধরছে না। এঁদের মতো এই গণবিবাহে উপকৃত সব দম্পতিরই এক কথা- পণপ্রথা এবং অন্য প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেও যে নতুন ভাবে জীবন শুরু করা যায়, তা তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন! পাশাপাশি, সামাজিক বাধার সঙ্গে করোনা-পরিস্থিতির মোকাবিলাতেও যে পিছু হটবেন না, সে কথাও স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছেন দম্পতিরা!