#মালদহ- একসময় নীল চাষের জন্য বিখ্যাত ছিলো মালদহ ও মুর্শিদাবাদ। আজও মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু নীলকুঠি। মূলত ইংরেজরা এখানে এসে নীলের ব্যবসা শুরু করেন। অধিকাংশ নীলকুঠিগুলি ইংরেজদের হাতে তৈরি। তবে হাতে গোনা কয়েকটি নীলকুঠি ছিল ডাচদের মালিকানায়।
ডাচদের তৈরি সেইসব নীলকুঠির অন্যতম হল মানিকচকের মথুরাপুরের নীলকুঠি। আজও ইতিহাসের বহু সাক্ষী নিয়ে নির্জনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই নীলকুঠি। মালদহ জেলার মানিকচক ব্লকের গঙ্গার তীরবর্তী এলাকা মথুরাপুর। একসময় গঙ্গার অববাহিকা ধরে মথুরাপুরে এসে নীলের ব্যবসা শুরু করেছিল ডাচরা। মথুরাপুরে সেই সময় ভালো নীল উৎপাদন হতো। এছাড়াও চলতো আমদানি রফতানি। তাই এখানেই তৈরি হয়েছিল সুবিশাল একটি নীলকুঠি। কিন্তু বর্তমানে অবহেলা অনাদরে পড়ে রয়েছে এই নীলকুঠি ভবনটি।
প্রাচীন বাড়িটি দাঁড়িয়ে রয়েছে তার নিজের স্বমহিমায়। বর্তমানে এই নীলকুঠির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন রাজস্থানবাসী পারেখ পরিবার। আগামীতে তিনিও হয়তো চলে যাবেন এখান থেকে। ইতিহাসের বহু সাক্ষী প্রমাণ বহন করে চললেও, বর্তমান সরকার প্রশাসন কোনরকম দেখভালের দায়িত্ব নিচ্ছে না এই নীলকুঠিটির। ব্রিটিশ সার্ভেয়ার ও'ম্যালির ১৯০৫ সালের গেজেটিয়ারে জেলার নবীন ও বৃহৎ নীলকুঠি হিসাবে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মাঝখানের সময়ে ইন্টারনেট ও বিশ্বভারতীর অধ্যাপক দেবাশিস আচার্যের সহযোগিতায় মথুরাপুরের নীলকুঠি সম্পর্কে জানতে পারেন জেমস হেনসি সাহেবের বর্তমান বংশধরেরা। আঠারো শতকের প্রথমার্ধ থেকে এই নীলকুঠির দায়িত্বে ছিলেন নীলকর জেমস হেনসি সাহেব।
২০১৯ সালে নীলকর জেমস হেনসি সাহেবের পৌত্র সত্তরোর্ধ্ব জর্জ জেমস হেনসি ও তাঁর পরিবার মথুরাপুরের নীলকুঠি দেখতে আসেন। তাঁরা ঘুরে দেখেন গোটা নীলকুঠি চত্বর। ১৮৩৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত জেমস হেনসি সাহেবদের অধীনে ছিল নীলকুঠিটি। তাঁরাই এখানে নীল চাষের দায়িত্বে ছিলেন। এখানে এখনো তাঁদের ব্যবহৃত বিছানা, ডাইনিং টেবিল থেকে অনান্য আসবাবপত্র রয়েছে। কিন্তু, আজ অনাদরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে সমস্ত কিছু।
১০০ বছরের বেশি সময় ধরে নীলকুঠি সহ সেখানকার সমস্ত কিছু সংরক্ষণ করে আসছেন বর্তমান নীলকুঠি দায়িত্বে থাকা ভূতপূর্ব জমিদার বাহাদুর সিংহ সিংহী, রাজেন্দ্র সিংহ সিংহী এবং প্রকাশ সিংহ সিংহীরা। প্রায় ১৫০ বছর ধরে সংরক্ষিত রয়েছে ঠাকুরদার ব্যবহৃত আসবাবপত্র। তাই দেখে বিস্মিত ও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছিলেন নিউজিল্যান্ড থেকে আসা বংশধরেরা। তাঁরা ঘুরে দেখেন সেই সময়ের আসবাবপত্র থেকে গৃহসজ্জার সামগ্রী। সমস্ত কিছু দেখে নীলকুঠিটি হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে যান হেনসি সাহেবের বর্তমান প্রজন্ম। জেলার ঐতিহাসিক মহলের একান্ত ইচ্ছা থাকলেও সে কাজ একেবারেই এগোয়নি।
সপ্তদশ শতকের নীলকর ও চিত্রশিল্পী হেনরি ক্রেটনের লেখা থেকে জানা যায়, বাংলা-বিহার-ওড়িষ্যায় ব্যবসা পরিচালনাকারী মালদহে অবস্থিত নীলকুঠিগুলির মধ্যে মথুরাপুর কুঠি বয়সে সবথেকে নবীন। কিন্তু জেলার অর্থনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই কুঠিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
মানিকচক বা মথুরাপুরের পুরনো বাসিন্দারা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আমলের নানা ডাকঘর, ভূমিরাজস্ব দফতর সহ সরকারি অফিস, এই কুঠিতেই তাদের প্রাথমিক কাজ আরম্ভ করে। স্থানীয়দের দাবি, এই নীলকুঠি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সরকারিভাবে এটির অধিগ্রহণ করে দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে বেঁচে থাকবে মালদহের ইতিহাসের এক অনালোকিত অধ্যায়।
Harshit Sinha
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Malda