#জলপাইগুড়ি: ঘাত-প্রতিঘাত শব্দের অর্থ প্রায় সকলেই জানি। কিন্তু এ যেন সিনেমার মতো দৃশ্য! বন্যপশু মারল স্কুলছাত্রকে, তার বদলে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল তাকেই। কীভাবে? গণপিটুনি! এটা যদি মানুষ হত, এতক্ষণে বিক্ষোভ, পুলিশ ডেকে ধস্তাধস্তি, থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ, অপরাধীদের শাস্তির দাবি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ভল্লুক তো পশু! ওর মৃত্যুতে কী অন্য ভল্লুকরা এসে বিক্ষোভ দেখাবে? চিন্তার বাইরের বিষয়!
বন্যপ্রাণ-মানুষের সংঘাতে ফের মৃত্যু মানুষ ও বন্যপ্রাণের। এমনই বিরলতম ঘটনার সাক্ষী থাকল ডুয়ার্সের বলয়। চাবাগানে ভল্লুকের আক্রমণের শিকার হল এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। রেগে আগুন চাবাগানের শ্রমিকরা! রীতিমত ক্ষুব্ধ জনতা পিটিয়ে মারল ভল্লুককে। ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের মেটেলি চাবাগানের মূর্তি ডিভিশনের সামসিং চাবাগান লাগোয়া ৩ নম্বর সেকশনের এই ঘটনা যেন কাঁপিয়ে দিয়েছে সকলকে। এমন ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল ডুয়ার্স।
লোকালয়ে এর আগে বন্যপ্রাণ ঢোকার মত ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম আমরা। কোথাও বাড়ির সিঁড়িতে চিতাবাঘ, কোথাও আবার খোলা মাঠে দাতালের দেখা। ডুয়ার্স বা চা বলয়ে এই ঘটনা বারবার সামনে এসেছে। এরকম ঘটনা রুখতে বারবার এগিয়ে এসেছিল বিভিন্ন সংগঠন। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির তরফে বারবার সচেতন করা হলেও ঘটনা কিন্তু বেড়েই গিয়েছে। কথায় আছে, 'বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।' এই কথা এই সময়ে প্রাসঙ্গিক। উদ্যোগী পরিবেশপ্রেমী সংগঠন, তৎপর বনদফতরও। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই যেন ভূত! খামতি থেকেই যাচ্ছে সচেতনতার মধ্যে। কখনও সভ্যের, কখনও বন্যের। প্রাণহানি যেন থামছেই না।
এদিন, মেটেলি লাগোয়া একটি চা বাগানে ভল্লুকের আক্রমণে প্রাণ হারায় এক স্কুলছাত্র। ক্ষিপ্ত জনতাও পেটাতে শুরু করে সেই ভল্লুককে। প্রাণ হারায় বন্যও।
এদিনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কয়েকদিন আগেই হাতির মৃতদেহ উদ্ধার হল জলপাইগুড়ি জেলার মোরাঘাট বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায়। মোরাঘাট জঙ্গল লাগোয়া মঙ্গলকাটা বনাঞ্চল এলাকার ধানখেতের ঘটনা। বন দপ্তরের প্রাথমিক অনুমান ছিল, মাকনা হাতিটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ধান খেতেই হাতিটি ওই জমিতে এসেছিল বলে অনুমান। সঙ্গে দেহের পাশ থেকে বিদ্যুতের তার উদ্ধার হওয়ায় বনদপ্তরের ধারনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে হাতিটির। হাতিটির শুঁড়েও বিদ্যুৎয়ের শক (shock) লাগার চিহ্ন খুঁজে পান বনদপ্তরের কর্মীরা।
সলিটারি নেচার অ্যান্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন ফাউন্ডেশনের (Solitary Nature and Animal Protection Foundation - SNAP) কর্নধার ও প্রধান কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, "যদি কোনও মানুষ ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত অপর আরেক মানুষকে মারেন, তবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, অথবা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাহলে সেই শাস্তিটা কেন অবলা জীবকে মারার পর পায় না মানুষ। এই শাস্তির ভয় যতদিন না মানুষ পাবে, ততদিন হাতিমৃত্যু অথবা অন্য কোনও অবলা জীবের মৃত্যু রোখা সম্ভব নয়।"
এদিন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, 'নানা কারণে পশুরা লোকালয়ে চলে আসে। আরও সচেতনতা প্রচার দরকার। আরও সচেতন হওয়া উচিত। নাহলে বন্যপ্রাণ বিপন্ন হতে আর বেশি সময় নেই।'
উল্লেখ্য, অক্টোবরের ১৬ তারিখেও মোরাঘাট জঙ্গল লাগোয়া মধ্য খুট্টিমারির ভাণ্ডারকুরা এলাকায় একইভাবে এক মাদি হাতির দেহ উদ্ধার হয়। এনিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত করে জানা যায় যে হাতিটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই প্রাণ হারায়। এ
কের পর এক এমন বন্যপ্রাণ বিপন্ন হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির মধ্যে। সংগঠনগুলির সদস্যদের দাবি, ঠিকমতো প্রচার করা উচিত এর বিরুদ্ধে। প্রচারের অভাব ও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবেই এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত হয়েই চলেছে।
Vaskar Chakraborty
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Animal, Death, Jalpaiguri, North bengal news, Wildlife