ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং: \"একি মায়া, লুকাও কায়া জীর্ণ শীতের সাজে | আমার সয় না সয় না সয় না প্রাণে কিছুতে সয় না যে।\" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান এখন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। তবে শীত এখন জীর্ণ নয়, স্বমহিমায় বিরাজ করছে। তাও আবার বসন্তের চাউনিতে...!চলতি মরশুমে প্রকৃতি যেন ঢেলে দিয়েছে তাঁর শোভা প্রকৃতিপ্রেমীদের। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের পাহাড় এলাকায় লাগাতার তুষারপাত, রেকর্ড ভেঙেছে বিগত বহু বছরের। ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া তুষারপাতের ধারা গোটা জানুয়ারিতে অব্যাহত ছিল। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এখনও বিক্ষিপ্ত বিরতিতে তুষারপাত হয়ে চলেছে। শুক্রবার সকাল থেকে লাচেন-লাচুং সহ বিস্তীর্ণ এলাকা তুষারের সাদা চাদরে ঢেকে যায়। একই সঙ্গে হালকা তুষারপাত শুরু হয়েছে দার্জিলিংয়ের সান্দাকফুতেও। পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংয়ে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। মূলত পশ্চিমী ঝঞ্ঝার পাশাপাশি পূবালী হাওয়ার দাপটে আবহাওয়া হঠাইৎ এই দিকে বাঁক নিয়েছে। এদিন সমতল শিলিগুড়িতেও হালকা বৃষ্টি শুরু হয় দুপুর থেকে। তাপমাত্রাও সর্বত্রই খানিকটা কমে আসে। জানা গিয়েছে, রাতের দিকে বৃষ্টি বাড়তে পারে। সিকিম আবহাওয়া দপ্তরের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা জানান, একই পরিস্থিতি থাকবে সোমবারও। কয়েকটি এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টি ও তুষারপাতের জেরে পাহাড়ি অঞ্চলের দিনের তাপমাত্রা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। আর এদিকে সমতলেও তাপমাত্রার পারদ নিম্নগামী। পাহাড় আর সমতলের তাপমাত্রার পারদ এখন যেন সমানুপাতিক! পাল্লা দিয়ে আবহাওয়ার মুখ ভার সমতলেও। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় আকাশের মুখ ভার সকাল থেকেই। শিলিগুড়ি সহ একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকটা কম থাকলেও, হিমেল অনুভব কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে মানুষকে। পাশাপাশি, উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার আকাশ সকাল থেকেই পরিষ্কার ছিল। কিন্তু দুপুর হতেই কালোমেঘে ঢেকে যায় আকাশ। শুরু হয় প্রবল শিলাবৃষ্টি। ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে যায় জনজীবন। আর সেইসঙ্গে পাহাড়ে এখনও যে শীতের দাপট কমেনি তা এদিন ফের প্রমাণিত। সেইসঙ্গে হিমেল হাওয়া পর্যটকদের মন ভোলাতে ব্যস্ত। তাই দক্ষিণবঙ্গ থেকে অন্য রাজ্যে যারা পাহাড়ের এমন দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত নন, তাঁরা আচমকা ঘুরতে এসে আপ্লুত। আর পর্যটকদের খুশি দেখে, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষের মনেও জোর এসেছে। হাসি ফুটেছে গাড়ি চালকদের থেকে হোটেল ব্যবসায়ী ট্যুর গাইড অপারেটরদের মুখেও। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের (Himalayan Hospitality and Tourism Network) সাধারণ সম্পাদক (general secretary) সম্রাট সান্যাল নিউজ ১৮ লোকালকে বলেন, 'তুষারপাতের জন্য যাতায়াত করা থেকে মানা করা হয়েছে পর্যটকদের। সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। হোটেল থেকে বের হতে মানা করে দেওয়া হয়েছে। তুষারপাতের কারণে রাস্তা স্লিপারি (slippery) হয়ে গিয়েছে। ফলে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র নয়। দার্জিলিং এবং সান্দাকফুতেও একই অবস্থা।' তবে সম্রাটবাবু জানিয়েছেন, তুষার আগাগোড়াই পর্যটনের জন্য 'শ্রী'। আর সেই তুষারকে 'প্রোমোট' করে পর্যটন চলছে জাঁকিয়ে। বিশেষ করে সিকিম এবং দার্জিলিংয়ের উঁচু এলাকায় এখনও তুষার রয়েছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Jalpaiguri, Siliguri