#পশ্চিম বর্ধমান: ভ্যাকসিন এর জন্য হা-পিত্যেশ চলছেই। করোনাভাইরাস এর তৃতীয় ঢেউ দেশে আবার বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ থেকে চিকিৎসকরা। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মারণ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে তাই মানুষ এখন ভ্যাকসিন নিতে মরিয়া। 18 থেকে 44 বছর বয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে আগেই। কিন্তু খুব কম জায়গাতেই সেই ভ্যাকসিনেশনের কাজ শুরু হয়েছে। উল্টোদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনভাবেই উঠছে ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ।এরই মাঝে ভ্যাকসিন না পেয়েও সার্টিফিকেট পেয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এল দুর্গাপুরে। ঘটনাটির কেন্দ্রে রয়েছেদুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল।
দুর্গাপুর মার্কনির বাসিন্দা রেখা দে ও তার ভাইপো বেশ কয়েকদিন ধরেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে হন্যে হয়ে পড়েছিলেন ভ্যাকসিনের জন্য। দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছেন লম্বা লাইনে। কিন্তু প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়নি। অবশেষে চলতি মাসের এক তারিখে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আধার কার্ডের ফটোকপি জমা দিয়ে যেতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার সূচি নির্ধারিত হলে তাদের ফোন করে ডেকে নেওয়া হবে। কিন্তু সেই ফোন আসেনি। তবে ফোনে চলে এসেছে ভ্যাকসিন নেওয়ার সার্টিফিকেট। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ রেখা দে ও তার ভাইপোর। এমন ঘটনা কি করে সম্ভব, তা ভেবেই তাজ্জব তাঁরা। এই ঘটনার পরেই তাঁরা ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের পরিবারের অভিভাবক মিতাদে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন, বিষয়টি নিয়ে যত দূর যেতে হয়, তারা যাবেন। কিন্তু তাদের মনে প্রশ্ন একটাই, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ না পেলেও, তার সার্টিফিকেট তাঁরা পেলেন কীভাবে। ফলে প্রথম ডোজ কি তাঁরা পাবেন? প্রশ্নের উত্তর পেতে দিশেহারা তাঁরা।
বিষয়টি নজরে আনা হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ধীমান মন্ডলের। যদিও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখানে দুর্নীতির কোনো প্রশ্ন নেই। কোন যান্ত্রিক সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।
তবে বিষয়টি মানতে নারাজ রেখা দে এবং তার পরিবার। তাদের অভিযোগ, একদিকে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা, তারওপর দীর্ঘক্ষণ লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তারপরেও ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টে ভ্যাকসিন না পাওয়া সত্ত্বেও সার্টিফিকেট চলে আসছে। যার ফলে পরে ভ্যাকসিন পেতে অসুবিধা হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় মানুষজন ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে কার্যত সহমত হচ্ছেন। তারা বলছেন, দিনের-পর-দিন লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না যদি এখন ভ্যাকসিন না পাওয়া যায়, তাহলে করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করতে হবে। আবার লকডাউন এর সম্মুখীন হতে হবে মানুষকে। তাই তারা প্রশাসনের কাছে আবেদন করছেন, যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দেওয়া হোক সবাইকে। ভ্যাকসিনেশনের কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হোক।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। ভ্যাকসিনে দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান মানুষজন। হাসপাতালের সুপার, এক পুলিশ আধিকারিক সমেত বেশ কয়েকজনকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ভ্যাকসিনেশনের কাজ। যদিও পরে পুলিশি আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ পুনরায় চালু হয়। তবে ভ্যাকসিন না পেয়েও, সার্টিফিকেট পেয়ে যাওয়ার ঘটনায় কার্যত বিক্ষোভের আগুনে আবার কিছুটা ঘি পড়ল। এখন দেখার প্রশাসন বিষয়টির উপর কিভাবে নজর দেয় এবং কি পদক্ষেপ গ্রহন করে।
নয়ন ঘোষ
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, Coronavirus vaccine, COVID-19, Durgapur