#নয়াদিল্লি: কথায় বলে পায়ের তলায় সর্ষে! ইচ্ছে হলেই ছুটি কাটাতে দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়তে চায় মন। আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তো নদী-সমুদ্র-পাহাড়-জঙ্গলের হাতছানি তো মুঠোফোনেই রয়েছে!
আসলে দিনের পর দিন মাথা গুঁজে বসে অফিস এবং ঘরের কাজ করতে করতে হাঁফিয়ে ওঠে মন এবং শরীর। আর এই একঘেয়ে জীবনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে পড়ে মাঝেমধ্যেই তাজা হাওয়ায় শ্বাস নিলে তরতাজা হয় মন। তাই আর কী? দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লেই শান্তি। ঘরের কাছে কি জায়গার অভাব রয়েছে? আসলে আমাদের দেশেই তো ভ্রমণের জন্য নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থান রয়েছে। এক-এক ঋতুতে যার এক-এক রকম সৌন্দর্য। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতিকে মলদ্বীপে পালাতে সাহায্য করেছে ভারত? কী জানাল ভারতীয় হাইকমিশন?
কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা তো খুবই সহজ। তেমন পরিকল্পনাও করতে হয় না। তবে মাঝেমধ্যে মনে বিদেশে ঘোরার সাধও উঁকি দিয়ে যায়। তবে সাধ জাগলেও নিজের সাধ্যের কথাটা মাথায় চলে এলে দমে যায় বিদেশ ভ্রমণের ইচ্ছেগুলো। আসলে দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার আগে নানা রকম পরিকল্পনা তো ছকতেই হয়, তার সঙ্গে রয়েছে ভিসার ব্যাপারে চিন্তাটাও। তাই ভারতের বাইরে আমরা এমন কয়েকটি জায়গার সন্ধান দেব, যেখানে ঘুরতে গেলে ভিসা নিয়েও ভাবতে হবে না, আর পকেটেও তেমন টান পড়বে না।
দুবাই (Dubai):
বিলাসব্যসন এবং শপিং-এর অন্যতম বড় কেন্দ্র হল দুবাই। পশ্চিম এশিয়ার ঝাঁ-চকচকে এই দেশ ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে ভীষণই জনপ্রিয়। সত্তরেরও বেশি উচ্চমানের শপিং সেন্টার রয়েছে এই শহরে। শুধু তা-ই নয়, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, স্থাপত্য-ভাস্কর্য এবং আধুনিক জীবনযাত্রার পীঠস্থান দুবাই। এটা দেখে হয়তো অনেকেই মনে করেন যে, দুবাই সকলের জন্য নয়। আসলে এটা একেবারেই ভুল ধারণা। শপিং মল থেকে ঐতিহ্যবাহী ভ্রমণ স্থান - সব কিছুই রয়েছে এই মরু-শহরে। বলা ভালো, সকলের জন্যই কিছু না-কিছু রয়েছে এই শহরে। আর ছুটির আনন্দ চেটেপুটে নিতে ঘোরা যেতে পারে বিভিন্ন ওয়াটার পার্কগুলিতে। অথবা ঘুরে দেখা যেতে পারে শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ আকাশছোঁয়া বহুতলগুলি। যাঁরা প্রকৃতির কোলে নিজেকে সঁপে দিতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে মরুভূমি এবং সমুদ্রের হাতছানিও। তাই দুবাই ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে হাতে একটু বেশিই সময় রাখা উচিত। তাতে সবটুকু আনন্দ সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যাবে। আর ভারতীয় ভ্রমণার্থীরা এই দেশে পৌঁছনোর পরেই ভিসা পেতে পারেন, যার মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৪ দিন।
নেপাল (Nepal):
ভারতের একদম পাশেই পাহাড়ে ঘেরা এক ছোট্ট দেশ নেপাল। আর পাহাড়ের নৈসর্গিক শোভা উপভোগ করতে কে-না চায়। গোটা বিশ্বের দশটি সর্বোচ্চ পর্বত রয়েছে এই দেশেই। ফলে সারা পৃথিবীর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছেই ভীষণ পছন্দের এই দেশ। বিশেষ করে ট্রেকিং যাঁদের নেশা, তাঁদের জন্য তো নেপাল যেন একটুকরো স্বর্গ! আর এভারেস্ট জয় করতে এবং এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে ট্রেকিংয়ের জন্য বহু পর্বতারোহীই ভিড় জমান এখানে। শুধু তা-ই নয়, যাঁরা পাহাড়প্রেমী, তাঁদের মধ্যেও জনপ্রিয় এই দেশ। নেপালের পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যেও মিশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন ভ্রমণপ্রেমীরা। আর নেপাল পৌঁছনো এখন অনেক সহজ। তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে আইআরসিটিসি। এ-ছাড়া শিলিগুড়ি থেকে যাতে সহজেই নেপালে পৌঁছনো যায়, পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে সম্প্রতি বাস পরিষেবাও চালু করা হয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা হল, নেপাল ভ্রমণের জন্য ভারতীয় পর্যটকদের ক্ষেত্রে কোনও রকম ভিসার প্রয়োজন হয় না।
আরও পড়ুন: উত্তাল দিঘার সমুদ্র! জলোচ্ছ্বাসে যা অবস্থা হল ব্যবসায়ীদের...
থাইল্যান্ড (Thailand):
সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিশেষ করে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের জায়গা হল থাইল্যান্ড। সে থাইল্যান্ডের পূর্ব প্রান্তই হোক কিংবা পশ্চিম প্রান্ত। এখানে বোধহয় সারা বছর প্রচুর পর্যটকের সমাগম লেগেই থাকে। ট্রপিক্যাল সৈকত, স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভালো খানাপিনা এবং নৈশজীবনের টানেই মূলত এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা। যদি ব্যাঙ্ককের কথাই ধরা হয়, তা-হলে দেখা যাবে ধর্মীয় স্থান থেকে শুরু করে সৈকত, শপিং কেন্দ্র, ভালো ভালো রেস্তোরাঁর দেখা মিলবে এখানে। আর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্যও স্বর্গ থাইল্যান্ড। নির্জন-নিরিবিলি সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটাতে চাইলে এই স্থান বেছে নেওয়া যেতে পারে। এত কিছু দেখে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, থাইল্যান্ডে বেড়াতে গেলে নির্ঘাত পকেটে টান পড়বে। একেবারেই না। বাজেটের মধ্যেই উপভোগ করা যাবে থাইল্যান্ডের বিলাসবহুল জীবনযাপন। ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দেশে পৌঁছনোর পরে ভারতীয় পর্যটকরা পেতে পারেন ভিসা। তবে এ-ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডে থাকার মেয়াদ হতে হবে ১৪ দিনেরও কম। যদি থাইল্যান্ডে দুই সপ্তাহের বেশি কাটানোর ইচ্ছে হয়, তা-হলে সে-ক্ষেত্রে স্থানীয় থাইল্যান্ডের দূতাবাসে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হবে।
সিঙ্গাপুর (Singapore):
দক্ষিণ চিন সাগরের উপর অবস্থিত সিঙ্গাপুর ভ্রমণপ্রেমীদের অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। বহুমুখী সংস্কৃতির পীঠস্থান সিঙ্গাপুরে গোটা বিশ্বের পর্যটকরা সব সময় ভিড় জমান। সিঙ্গাপুরে নানা জাতি, নানা ভাষা, নানা সংস্কৃতি এবং নানা ঐতিহ্যের মিশেল ঘটেছে। আসলে সিঙ্গাপুরে বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই রয়েছেন চিনা, মালয়, ভারতীয় এবং ইউরেশীয় বংশোদ্ভূত। সিঙ্গাপুরের রাস্তাঘাটে, দোকান-বাজারে এমনকী খাবারের ক্ষেত্রেও এই বৈচিত্র্যের স্বাদ নিতে পারবেন পর্যটকেরা। ফলে দারুণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যাবে সিঙ্গাপুর ভ্রমণে। তাই পরিবার অথবা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বিদেশে ছুটি কাটানোর ইচ্ছে থাকলে জলদিই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের পরিকল্পনা করে ফেলা যায়। এখানে উপভোগ করা যাবে চিড়িয়াখানা, নৈশ সাফারি, মারভেল স্টুডিও, সিঙ্গাপুর বোটানিক গার্ডেনের মতো আকর্ষণীয় স্থান। আর সিঙ্গাপুর ভ্রমণে গেলে যে খুব বেশি খরচ হবে, তেমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। তবে সিঙ্গাপুরে যেতে গেলে কিন্তু আগে থেকেই ভিসার জন্য আ বেদন করতে হবে ভারতীয় পর্যটকদের। কারণ এখানে পৌঁছনোর পরে ভারতীয় পর্যটকরা ভিসা পাবেন না।
ভুটান (Bhutan):
সারা পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে পরিচিত ভুটান। আর ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ এই পাহাড়ি দেশ। হিমালয় পর্বতমালা থেকে শুরু করে সুন্দর মনেস্ট্রি, রাজকীয় কোয়ার্টার এবং দারুণ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। শুধু তা-ই নয়, এখানে রয়েছে অসংখ্য পর্বতশৃঙ্গ এবং গিরিপথ, যা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে স্বর্গ। এ-ছাড়া সবুজ বনানী, উপত্যকা এবং পাহাড়ের শোভায় জুড়িয়ে যাবে চোখ। তাই কম খরচে যাঁরা বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ পেতে চান, তাঁরা ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন ভুটানের উদ্দেশে। আবার যাঁরা একা বা সোলো ট্রাভেলার, তাঁদের জন্যও ভুটান খুবই ভালো জায়গা। আর সবথেকে বড় কথা হল, ভুটান যাওয়ার জন্য ভারতীয় পর্যটকদের ভিসার প্রয়োজন হয় না। তবে দুটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈধ ভ্রমণ নথি সঙ্গে রাখতে হবে। সেগুলি হল - বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট, যার ৬ মাসের বৈধতা রয়েছে অথবা ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের থেকে প্রাপ্ত ভোটার আইডেনটিটি কার্ড।
মলদ্বীপ (Maldives):
দুনিয়ার সবথেকে জনপ্রিয় দ্বীপ বোধহয় মলদ্বীপই। চারিদিকে শুধু নীল সমুদ্রের হাতছানি। সাম্প্রতিক কালে মলদ্বীপ বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থলের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, হামেশাই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সেলেবকে মলদ্বীপে অবসরযাপন করতে দেখা যায়। ফলে এই স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে আমজনতার মধ্যেও। অনেকেই আজকাল মধুচন্দ্রিমার জন্য বেছে নেন সাগর ঘেরা মলদ্বীপকে। এই দ্বীপরাষ্ট্রের মূল আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হল সমুদ্রের নীল জল, পরিষ্কার নীল আকাশে, সাদা বালির সৈকত, প্রবাল প্রাচীর, বিলাসবহুল ওয়াটার ভিলা এবং অসাধারণ কিছু উপহ্রদ। যা এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রকে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। যাঁরা সমুদ্রপ্রেমী, তাঁরা সাধ্যের মধ্যেই মলদ্বীপ ঘোরার সাধ পূরণ করতে পারবেন। আর মলদ্বীপে পৌঁছনোর পরে ভিসা পাবেন ভারতীয় পর্যটকরা।
হংকং (Hongkong):
যাঁরা শপিং বা কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য স্বর্গরাজ্য হংকং। তবে তার মানে এটা নয় যে, শপিং ছাড়া হংকংয়ে আর কিছুই করা যাবে না। এই শহরের সংস্কৃতি, সৌন্দর্য, নানা ধরনের খাবারদাবার পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেবে। চিনের এই শহরের অফিসিয়াল নাম হংকং স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিজিয়ন বা হংকং এসএআর (Hong Kong SAR)। ছোট্ট অথচ ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে ভ্রমণের স্বাদ নেওয়াই যেতে পারে। বন্ধুবান্ধব-পরিবার নিয়ে তাই বিদেশ ভ্রমণের চিন্তাভাবনা করলে হংকংকে সেই তালিকায় রাখা যেতে পারে। এই শহরে রয়েছে নানা ধরনের বিনোদন পার্ক এবং দুর্দান্ত সব রেস্তোরাঁ। শুধু তা-ই নয়, এখানকার নৈশজীবনও তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। আর ছুটি কাটানোর মেয়াদ ১৪ দিনের কম হলে, এখানে ভ্রমণের জন্য ভারতীয় পাসপোর্টধারী পর্যটকদের ভিসার প্রয়োজন হয় না।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Travel Tips