জন্ম থেকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের বয়স বাড়ে। এক সময় বুড়ো হই আমরা। জন্ম, মৃত্যুর মতো বুড়িয়ে যাওয়াও প্রকৃতির ধর্ম। এটাই চিরন্তন। কিন্তু কেন বুড়িয়ে যায় আমাদের শরীর? বার্ধক্যকে থামিয়ে দেওয়া যায়? আটকে রাখা যায় আমাদের বয়স? এই নিয়ে বহু বছর ধরে চলছে নানা গবেষণা।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আমাদের দেহের কোষ ক্রমাগত বিভাজিত হতে থাকে। বিভাজন বন্ধ হয়ে গেলে কোষ এক সময়ে মরে যায়। এই ঘটনা থেকেই হতে পারে ক্যানসারসহ নানা রোগ।
বলা হয়, ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে টুপির মতো টেলোমিয়ার থাকে। এই প্রজাতির ডিএনএ হঠাৎ খুব ছোট হয়ে গেলে কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই কোষে বার্ধক্যজনিত সমস্যা শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে দেখেছেন টেলোমিয়ার কী ভাবে কাজ করে। টেলোমেরিক রিপিট কন্টেইনিং আরএনএ (টেরা), আরএনএ-র বিশেষ প্রজাতি টেলোমিয়ারের কার্যক্ষমতা অটুট রাখে। কিন্তু ক্রোমোজোমে টেরা কী ভাবে পৌঁছয়, সেই পদ্ধতি এখনও আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
টেরা হল নন কোডিং আরএনএ। এটি প্রোটিনে রূপান্তরিত হতে পারে না। বরং ক্রোমোজোমের কাঠামোগত কাজগুলো সম্পন্ন করে। বিজ্ঞানীরা টেরা-অণুকে দূরবীনের সাহায্যে অণুবীক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন আরএনএ-র একটা কণাই একে টেলোমিয়ারের প্রান্তে নিয়ে আসে।
টেরা একবার টেলোমিয়ারের প্রান্তে পৌঁছে গেলে নানা ধরনের প্রোটিনের সঙ্গে মেশে। এখানে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আরএডি ৫১। ইকোল পলিটেকনিক ফেডেরাল ডে লসান অ্যান্ড মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে যে এই আরএডি ৫১ টেরাকে ডিএনএ-র সঙ্গে লেগে থাকতে সাহায্য করে। ফলে আরএনএ-ডিএনএ হাইব্রিড তৈরি হয়। আগে ডিএনএ রিপেয়ারের ক্ষেত্রেই একমাত্র এ ধরনের হাইব্রিড অণু তৈরি হয় বলে জানতেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত নেচার পত্রিকায়।
তবে পদ্ধতি জেনে গেলেই যে বার্ধক্য আটকে রাখা যাবে, এমনটা নয়। বরং শক্তির নিত্যতা সূত্র বলে, জন্ম থাকলে মৃত্যু থাকবেই। বিজ্ঞানপ্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ আবিষ্কার হবে, মানুষের আয়ু বাড়বে। তবে অমরত্ব লাভ সম্ভব না। মানুষকে দীর্ঘ জীবন দেওয়া সম্ভব, তবে অনন্ত নয়। এটাই চরম সত্য, এটাই বিজ্ঞান।