#কলকাতা: বাতাসে বসন্তের ছোঁওয়া। শুরু হয়ে গিয়েছে ভ্যালেন্টাইন'স উইক। প্রোপোজ, রোজ, চকোলেট ডে পেরিয়ে আজ টেডি ডে (Teddy Day)। কেউ ব্যস্ত প্রেমিকার পছন্দের টেডি খুঁজতে, কেউ আবার টেডি গিফ্ট করার জন্য কোনও সারপ্রাইজ প্ল্যান করতে ব্যস্ত। কিন্তু ১০ ফেব্রুয়ারির এই দিনটিতে কেন সেলিব্রেট করা হয় টেডি ডে? এই সুন্দর মিষ্টি দিনের পিছনে কিন্তু একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রয়েছে এক সচেতনতামূলক বার্তাও। আসুন জেনে নেওয়া যাক!
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, এই ছোটখাটো আদুরে ভল্লুকটি বড্ড প্রিয়। সত্যি তো, এই টেডিটি কত মনকেমনের সাক্ষী! কত প্রেমিক-প্রেমিকার রাগ ভাঙিয়েছে সে! এই টেডি ঘিরেই রয়েছে বহু স্মৃতি। আর এই টেডির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের (Theodore Roosevelt) ডাকনাম। কারণ একসময়ে টেডি নামেই বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। কিন্তু এই সমস্ত ঘটনার সূত্রপাত কোথায়? ফিরতে হবে ১৯০২ সালে।
তখন মিসিসিপি ও লুসিয়ানিয়ার সীমান্ত সমস্যা চরমে। এরই মাঝে নভেম্বর মাসে একদিন মিসিসিপির গভর্নরের কাছ থেকে মিসিসিপির জঙ্গলে শিকার করার জন্য ডাক পেলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট। দীর্ঘক্ষণ সন্ধানের পরও তেমন শিকার মিলল না। বন্দুক হাতে প্রায় ব্যর্থ রুজভেল্ট। এদিকে অন্যরা ভাল্লুক শিকার করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে খুশি করতে বাকিরা একটি ভল্লুকছানা ধরে আনেন। একটি গাছের গোড়ার সেই ছোট্ট ছানাকে বাঁধার তোড়জোড় চলছে। এর পর প্রেসিডেন্টের সঙ্গী-সাথীরা তাঁকে ওই ভল্লুকছানার উপর গুলি চালাতে বলেন। এভাবে শিকার মেনে নিতে পারেননি রুজভেল্ট। তাছাড়া ওই নিরীহ, ছোট্ট ভল্লুকছানার উপরে গুলি চালাতে মন চায়নি তাঁর। ভল্লুকটিকে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গল থেকে ফিরে আসেন তিনি।
দিন কয়েকের মধ্যেই আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। প্রতিটি সংবাদমাধ্যমে প্রেসিডেন্টের মানবতার এই দৃষ্টান্তকে তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে ১৬ নভেম্বর ওয়াশিংটন পোস্টে (The Washington Post) ক্লিফর্ড বেরিম্যানের (Clifford Berryman) একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। ছবিতে দেখা যায়, পিছনে ভল্লুকছানা, সামনে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রুজভেল্ট। হাত নাড়ানোর মাধ্যমে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছেন অসম্মতির কথা।
আর এই কার্টুন দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ব্রুকলিনের খেলনার (Ideal Novelty and Toy Co) দোকানের মালিক মরিস মিচম (Morris Michtom)। এর পর তিনি নিজেও একটি খড়ঠাসা খেলনা ভল্লুক বানিয়ে ফেলেন। ধীরে ধীরে লোকজন সেই খেলনার প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। এই সময়ে একদিন রুজভেল্টের কাছে ছুটে যান মরিস মিচম। অনুমতি চান সেই স্টাফড খেলনাকে 'টেডি বিয়ার' নাম দেওয়ার। প্রেসিডেন্টের সম্মতিতে এর পর থেকেই শুরু হয় টেডি বিয়ার নামে এই খেলনা ভল্লুক বিক্রির রমরমা। যা আজও চলে আসছে।
এই ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে জমে উঠুক টেডি ডে। টেডি উপহার দেওয়ার পাশাপাশি কাছের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন এই দিনের নেপথ্যে থাকা গল্পটাও!