#ক্যালিফোর্নিয়া: ক্যানসার চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কার। প্রাণীদেহে প্রোটিন তৈরির পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ব্যাকটেরিয়ার দেহে সাফল্য মিলেছে। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এবার মানুষের শরীর।ক্যালিফোর্নিয়ার ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের এই সাফল্যে আশার আলো দেখছেন ক্যানসার চিকিৎসকরা। ঠিক কী করেছেন,
ফ্লয়েড রোজেনবার্গের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা? জীবজগতে জেনেটিক ইনফরমেশন বা তথ্য রাখার একটাই জায়গা। তা হল কোষের ডিএনএ।এই ডিএনএ গঠিত চারটি বেস নিয়ে। অ্যাডেনিন,গুয়ানিন, সাইটোসিন ও থাইমিন। এদের মধ্যে অ্যাডেনিন, থাইমিনের সঙ্গে আর গুয়ানিন, সাইটোসিনের সঙ্গে জোড় বেঁধে গড়ে তোলে ডিএনএ-এর ডাবল হেলিক্স গঠন।
এইভাবে জোড় বাঁধা যে কোনও তিনটি বেস পরপর জুড়ে আবার তৈরি করে একটি কোডন।আমাদের শরীরে যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এই কোডনগুলি। কারণ, আসলে এই কোডনগুলি হল অ্যামাইনো অ্যাসিড। প্রকৃতিতে স্বাভাবিক ভাবে উপস্থিত এমন অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংখ্যা কুড়িটি। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলিই এককোষী জীব থেকে মানবদেহ--সমস্ত জীবদেহে প্রোটিন তৈরি করে। ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের শরীরে কোষের বিভাজন ঘটে অস্বাভাবিক দ্রুত হারে। যে কোনও জীবের ক্ষেত্রে শিশু থেকে পূর্ণবয়স্ক হয়ে ওঠার পথে এই কোষ বিভাজন অন্যতম জরুরী শর্ত এবং আশির্বাদ। অথচ, একজন ক্যানসার আক্রান্তের শরীরে সেই কোষ বিভাজনই সাক্ষাৎ অভিশাপ। কোষ বিভাজনের এই বার্তা বা মেসেজ জীবদেহে বহন করে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি। যাদের গঠনের মূলে সেই ডিএনএ। বিজ্ঞানীরা এতদিন ক্যানসার আক্রান্তদের শরীরে এই অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনকে আটকাতে তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি। কেমোথেরাপির মাধ্যমে অতিরিক্ত বা ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘বিদ্রোহী’ বলে চিহ্নিত কোষগুলিকে মেরে ফেলা ছাড়া। সে চিকিৎসায় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি, সাফল্যের হার খুবই কম। রোজেনবার্গের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারে অ্যাডেনিন,গুয়ানিন, সাইটোসিন ও থাইমিন ছাড়াও বাইরে থেকে, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি দুটি প্রোটিনকে ডিএনএ-এর বেসে সফল ভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে। ‘বহিরাগত’ বলে ডিএনএ-র চার মূল বেস তাদের প্রত্যাখ্যান করেনি। যে ব্যাকটেরিয়ার শরীরে এই ডিএনএ বেসের সফল অনুপ্রবেশ হয়েছে , তার কোষ বিভাজনও এর পর হয়েছে অন্য নিয়মে। ওই ব্যাকটেরিয়ার চিরাচরিত নিয়মে নয়। এই পরীক্ষা যদি এর পর মানবদেহেও সফল হয় তবে ক্যানসারের মত অসুখের ক্ষেত্রে কোষ বিভাজনকে রীতিমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। ক্যানসার গবেষক ও চিকি্যসকরা আপাতত রয়েছেন সেই সাফল্যের প্রতীক্ষায়।
প্রতিবেদন: অনির্বাণ সিনহা