একজন রোগীর শরীরে যে কোনও রকমের ব্যথাই অত্যন্ত অসহ্য পরিস্থিতি তৈরি করে। ব্যথা এ ক্ষেত্রে দু’রকমের হতে পারে। তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। তীব্র ব্যথা কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। যদি এই ব্যথা ছয় মাসের বেশি থাকে তা হলে তাকে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বলা হয়। জটিল পরিস্থিতিতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বোঝা এবং তার চিকিৎসা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা রোগীর জীবনকেও বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে। আর সেই ব্যথা যে খুব একটা পজিটিভ কোনও প্রভাব ফেলে না সেটা বলাই বাহুল্য।
সুতরাং, ব্যথা হলে, বিশেষ করে সেটা ক্রনিক পেইন হলে চুপ করে না থেকে সেটা নিয়ে কথা বলা এবং সেই বিষয়ে সচেতনতার প্রসারের জন্যই এই প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি ঠিক কী ভাবে এই প্রোগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন সেই বিষয়ে আইএএসপি কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। তবে তার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন এই ক্রনিক ব্যথা আসলে কী এবং আপনি কী ভাবে এর মোকাবিলা করতে পারেন।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডার্স অ্যান্ড স্ট্রোকের দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে ব্যথা বেশ কিছু দিন ধরে থেকে যায় সেটাই দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক ব্যথা। এই ব্যথা স্বল্পকালীন বা অ্যাকিউট ব্যথার মতো কোনও স্বাভাবিক অনুভূতি নয়। এটা কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস এমনকি এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রাথমিক আঘাত যেমন কবজি মুচকে যাওয়া, বাত, কানে সংক্রমণ বা বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই ব্যথা হয়।
অনেকের আবার কোনও আঘাত না পেলেও বা স্বাস্থ্যজনিত কোনও কারণ না থাকলেও ব্যথা হয়। যেমন মাথাব্যথা, পিঠের নিচের অংশের ব্যথা। এএপিএমের অনুমান অনুযায়ী সারা বিশ্বে ১.৫ বিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভোগেন। তার প্রধান তিনটি হল পিঠের নিচে ব্যথা, গুরুতর মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন এবং ঘাড়ে ব্যথা।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কী ভাবে শরীর ও মনকে প্রভাবিত করে?
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা জীবনে অনেক নেগেটিভ প্রভাব নিয়ে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে আপনার চলাফেরা ও প্রতিদিনের কাজকর্ম অনেক সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। কাজ কম হলে আবার পেশির ক্ষমতা কমে গিয়ে সেটা দুর্বল হয়ে যায়। যে হেতু দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা মস্তিষ্ক ও শিরদাঁড়ার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাই সেটা মানসিক ভাবেও রোগীকে কিছুটা বিপর্যস্ত করে দেয়।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সঙ্গে কী ভাবে মোকাবিলা করবেন?
যদি আপনি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় কাবু হয়ে থাকেন তা হলে ক্রনিক ডিজিজ সেলফ ম্যানেজমেন্ট অনুষ্ঠান আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে ব্যথার কারণ খুঁজে বের করতে। উনি হয়তো আপনাকে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি বা ওষুধ বলে দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
তবে অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার প্রকৃত কারণ বোঝা যায় না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াও প্রয়োজন। একজন ব্যথা বিশেষজ্ঞ বা পেন ফিজিশিয়ান তাঁর মাল্টিমোডাল পদ্ধতিতে ব্যথা কমিয়ে দিতে পারেন। অনেক সময় পেইন ইন্টারভেনশন (বিশেষ রকমের ব্লক দিয়ে চিকিৎসা, যার প্রশিক্ষণ ফিজিশিয়ানদের দেওয়া হয়) ম্যাজিকের মতো কাজ করে এবং ব্যথা দ্রুত কমে যায়।
পেইন ম্যানেজমেন্টের অন্যান্য পদ্ধতি হলঃ
১. নিয়মিত শারীরিক কসরত: স্ট্রেচিং ও ব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীর থেকে এনডোরফিন নিঃসৃত হয় যা ব্যথা কমিয়ে দেয় ও আপনাকে ভাল রাখে। ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট আপনাকে বলে দেবেন যে কোনও ব্যায়াম আপনার জন্য ভাল হবে।
২. মানসিক ও শারীরিক বিশ্রাম: ডিপ ব্রিদিং, ধ্যান, যোগা ও মনোসংযোগ ব্যথা কমিয়ে দেয়।
৩. আইস ও হিট থেরাপি: যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হচ্ছে সেখানে বরফ সেঁক দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Pain