আজকাল একটি অন্যতম সমস্যা হল কিডনির রোগ। নীরবে শরীরের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করতে পারে এটি। হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস বা বংশগত রোগের প্রবণতা থাকলেও কিডনিতে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। এর জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও কিডনির সমস্যার জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে কিডনিকে সুস্থ রাখতে কয়েকটি সাধারণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
এ নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন Dr. L H Hiranandani Hospital-এর CEO সুজিত চট্টোপাধ্যায় (Sujit Chatterjee)। তাঁর কথায়, দৈনন্দিন জীবনে কিছু সাধারণ অভ্যাসে নজর দিলেই সুস্থ থাকবে কিডনি।
ওষুধ ও অতিরিক্ত মাত্রায় পেইন কিলার থেকে দূরে থাকতে হবে
অতিরিক্ত মাত্রায় পেইন কিলার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে কিডনির উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে কোনও বিকল্প চিকিৎসা তথা আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্রের উপরে নজর দেওয়া যেতে পারে।
নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ব্লাড সুগার
অতিরিক্তি ব্লাড সুগার থাকলে সচেতন হতে হবে। কারণ কিডনির উপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এটি। ব্লাড সুগার বাড়লে কিডনির পরিস্রুতকরণের ক্ষমতা কমে যায়। এমনকি কিডনি ফেলিওর হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সচেতন থাকতে হবে। ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
হাইড্রেশন
এর কোনও বিকল্প নেই। ফ্লুইড কনজাম্পশনের জেরে কিডনির পাথরের সমস্যা দূর হয়। তাই কিডনি ভালো রাখতে শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে কোনও ধরনের ফ্লুইড বা জল। এক্ষেত্রে জুস, দুধ, স্যুপ বা নানা রকমের হার্বাল চা পান করা যেতে পারে। তবে সোডা বা কোনও অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে যাওয়া ভালো। মাথায় রাখতে হবে, জল পানে যেন কোনও ত্রুটি না থাকে। প্রতি দিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করতে হবে। এতে কিডনি থেকে টক্সিন দূর হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন বাড়লে কিডনির উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও একটি বড় বিষয়। এক্ষেত্রে শরীর চর্চা ও ডায়েটের উপরে নজর দিতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে
বেশি মাত্রায় ধূমপান ও মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করে। কারণ শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর জেরে কোনও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও হতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
রক্তচাপ তথা ব্লাড প্রেশার নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত ব্লাড প্রেশার চেক করাতে হবে। কারণ রক্তচাপে সমস্যা হলে কিডনির উপরেও প্রভাব পড়ে। এমনকি কিডনি ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া-দাওয়া
কিডনি ভালো রাখতে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে। লবণের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থাৎ কমাতে হবে সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ। এক্ষেত্রে বাইরের খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যেসে লাগাম দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। অর্থাৎ লেবু, কমলালেবু, আঙুর, ব্লু-বেরি বা এই জাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে।
নিয়মিত শরীরচর্চা
নিয়মিত শরীরচর্চাও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এর সাহায্যে দ্রুত টক্সিন ক্ষয় হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচবার শরীরচর্চা কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এক্ষেত্রে যোগ ব্যায়ামও অত্যন্ত উপকারী।
রুটিন বডি চেক-আপ
রুটিন মেনে চেক-আপ করিয়ে নিতে হবে। এর জেরে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা যাবে। যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আগেভাগেই সচেতন হওয়া যাবে। এক্ষেত্রে বছরে অন্তত ২-৩ বার চেক আপ করিয়ে নিতে হবে।